ক্রেডিট কার্ড কি ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম: বিস্তারিত তথ্য ।

আপনি কি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান ? তাহলে আপনি সঠিক স্থানে এসেছেন। এই লেখাটি শুধু আপনার জন্য।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু হয় ১৯৯৬ সালে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এর হাত ধরে।

তারপর তৎকালীন বণিক বাংলাদেশ ব্যাংক যা বর্তমানে লংকাবাংলা ব্যাংক নামে পরিচিত এবং ন্যাশনাল ব্যাংকও চালু করে।

বর্তমান সময়ে ক্রেডিট কার্ড অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কেননা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে ।

তাই আজ আমি আপনাদের সুবিধার্থে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত নানান গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনা করব। যাতে করে আপনি কোনক্রমে-ই ক্ষতির সম্মুখীন না হন।

অতএব আপনাকে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়তে হবে। তাহলে আপনি ক্রেডিট কার্ডের ব্যপারে পরিপূর্ণ ধারণা পেয়ে যাবেন এবংসমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন । চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম

ব্যবহারের সুবিধার্থে ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে নানান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানতে হবে । তাহলে ব্যবহার করতে সহজ হবে ।

এজন্য আমি ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে যে সব বিষয়ে ধারনা দিবো তা সংক্ষিপ্ত আকারে নিম্নে উল্লেখ করলাম : 

  • ক্রেডিট কার্ড কি ?
  • ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম ।
  • ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা ।
  • ক্রেডিট কার্ড আবেদনের নিয়ম ।
  • ক্রেডিট কার্ড কত প্রকার ?
  • ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করার উপায় ।
  • ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা উঠানোর নিয়ম ।

এখন বিস্তারিত আলোচনা করব । যাতে আপনার বুঝতে সুবিধা হয় । ফলে খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন ।

১. ক্রেডিট কার্ড কি ?

বর্তমান সময়ে ক্রেডিট কার্ড একটি আলোচিত বিষয়। ক্রেডিট কার্ড বলতে আমরা এমন একটি কার্ড কে বুঝি, যে কার্ডের মাধ্যমে আপনি একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা খরচ করতে পারবেন।

অর্থাৎ, আপনি এই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আপনি নির্দিষ্ট ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা লোন নিতে পারবেন।

আর এই লোন নেওয়া টাকার পরিমাণ কে মূলত ক্রেডিট লিমিট বলা হয়। ব্যাংক থেকে আপনাকে যে পরিমাণ ক্রেডিট লিমিট দেওয়া হবে।

আপনি ঐ পরিমাণ টাকা খরচ করতে পারবেন। আর ব্যাংক থেকে এই ক্রেডিট লিমিট দেওয়া হয় আপনার মাসিক ইনকামের উপর ভিত্তি করে।

বিভিন্ন ব্যাংক থেকে আপন নিয়মে তারা ক্রেডিট লিমিট দিয়ে থাকে। আর যেহেতু এই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যে লিমিট টা লোন সরুপ দেওয়া হয়।

এজন্য আপনি মাসব্যাপী লিমিটের মধ্যে থেকে ইচ্ছা মত টাকা-পয়সা খরচ করতে পারবেন। তবে, মাস শেষে আপনাকে খরচকৃত টাকা পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় আপনার ক্রেডিট কার্ডের সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাবে।

২. ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম

 ক্রেডিট কার্ড হস্তগত হওয়ার পর আপনি ক্রেডিট কার্ড গ্রহণযোগ্য এমন সব জায়গাতেই পেমেন্ট হিসেবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।

আপনি মাসজুড়ে ব্যাংক থেকে দেওয়া ক্রেডিট লিমিটের যে পরিমাণ টাকা-পয়সা খরচ করবেন।

মাস শেষে আপনাকে ব্যাংক থেকে খরচকৃত টাকার পরিমাণ অনুযায়ী একটা বিল পাঠানো হবে।

এবং ব্যাংক  থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় ও দেওয়া হবে। আর আপনাকে এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে হবে।

ব্যাংক এর পলিসি অনুযায়ী আপনাকে সময় দেওয়া হবে। তবে, সাধারণত ১০-১৫ দিন সময় দেওয়া হয়ে থাকে।

এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনি ব্যাংকের বিল পরিশোধ করলে পরবর্তী মাসের জন্য আবারো একটি ক্রেডিট লিমিট পেয়ে যাবেন।

উদাহরণস্বরূপ আপনাকে ব্যাংক থেকে ৬০ হাজার টাকার একটি লিমিট দেওয়া হয়েছিল। আর আপনি মাসজুড়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছেন।

এখন আপনি এই ৫০ হাজার টাকা লোন পরিশোধ করলেই আগামী মাসের জন্য আবারো ৬০ হাজার টাকার লিমিট পেয়ে যাবেন।

আরো পড়ুন : মোবাইল নাম্বার দিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র বের করার নিয়ম ২০২৩

৩. ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা কি ?

অনলাইন কেনাকাটার জগতে সবাই চায় অনলাইন ভিত্তিক সুবিধা। এজন্য বর্তমান সময়ে অনেকেই ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য আগ্রহী।

কিন্তু ব্যাংক আপনি চাইলেই আপনাকে ক্রেডিট কার্ড দিবে না। বরং ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য আপনার যোগ্যতা থাকা চাই।

আপনি যদি কোন ব্যবসায়ী বা চাকরিজীবী হন আর আপনার বেতন যদি ৩০ হাজার টাকার উপরে হয় ।

তাহলে কেবল আপনি ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। অন্যথায় আপনাকে কোন ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা দিবে না। 

৪. ক্রেডিট কার্ড আবেদনের নিয়ম 

প্রথমত আপনার স্যেলারি যদি ৩০ হাজার টাকা পরিমাণ হতে হবে। তারপর  ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করতে পারবেন ।

এ জন্য আপনাকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্রের সাথে আবেদন করতে হবে ।

  • ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর (টিন) সার্টিফিকেটের ফটোকপি লাগবে ।
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি লাগবে ।
  • পাসপোর্ট অন্যথায় ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি লাগবে ।
  • স্ট্যাম সাইজের একটি ছবি জমা দিতে হবে।
  • আর একজন নোমিনি ও থাকতে হবে।
  • পাশাপাশি নোমিনিরও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দিতে হবে।
  • আপনার ইনকাম সোর্সের প্রমাণপত্র ও জমা দেওয়া লাগতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা ট্রেড লাইসেন্সের একটি ফটোকপি আর চাকরিজীবীরা সেলারির একটি সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।

সর্বশেষ আপনি যে ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নিবেন ঐ ব্যাংকে আপনার একাউন্ট আছে কিনা অথবা পূর্বে ক্রেডিট কার্ড নিয়েছেন কিনা অথবা ক্রেডিট কার্ড আছে এমন একজনকে রেফারেন্স হিসেবে দেখাতে হবে।

৫. ক্রেডিট কার্ড কত প্রকার ?

ক্রেডিট কার্ডের প্রকার নিয়ে অনেকের মন হাজারো প্রশ্ন। চলুন আমরা জেনে নেই ক্রেডিট কার্ডের প্রকার।

  1. এয়ারলাইন ক্রেডিট কার্ড
  2. ট্রাভেল ক্রেডিট কার্ড
  3. শপিং ক্রেডিট কার্ড
  4. রিওয়ার্ডস ক্রেডিট কার্ড
  5. ক্যাশব্যাক ক্রেডিট কার্ড
  6. লো ইনকাম আর্নরের ক্রেডিট কার্ড
  7. ফুয়েল ক্রেডিট কার্ড
  8. এন্টারটেইনমেন্ট ক্রেডিট কার্ড

১. এয়ারলাইন ক্রেডিট কার্ড 

আপনার বিমানের টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে এয়ারলাইন ক্রেডিট কার্ড অনেক লাভজনক হবে‌। এয়ারলাইন ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আপনি এয়াপোর্টে বিভিন্ন সার্ভিসে এবং হোটেল বুকিং ও নানা ধরনের সুবিধা পেয়ে যাবেন।

২. ট্রাভেল ক্রেডিট কার্ড

আপনি যেহেতু সচরাচর দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাভেল যোগাযোগে যাতায়াত করে থাকেন। সুতরাং আপনার জন্য ট্রাভেল ক্রেডিট কার্ড অনেক লাভজনক হবে‌।

দেশের বিভিন্ন বাসে, ট্রেনে এবং অন্যান্য গাড়ি বুকিং এর সময় আপনি ট্রাভেল ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অনেক ছাড় পাবেন।

৩. শপিং ক্রেডিট কার্ড

যেহেতু মাসে কয়েকবার আপনাকে পারিবারিক শপিং করতে হয়। এজন্য শপিং ক্রেডিট কার্ড আপনার অনেক উপকারে আসবে।আপনি অনলাইন বা অফলাইন সবক্ষেত্রে শপিং করার সময় এই কর্ডের মাধ্যমে অনেক ছাড় পাবেন। 

৪. রিওয়ার্ডস ক্রেডিট কার্ড 

আপনি অন্যান্য সব ক্রেডিট কার্ড থেকে কম বেশি রিভার পয়েন্ট পাবেন। কিন্তু রিওয়ার্ডস ক্রেডিট কার্ড থেকে আপনি রিভার  পয়েন্ট পরিমাণে বেশি পাবেন। মূলত রিভার পয়েন্ট হলো আপনার ক্রেডিট কার্ড থেকে খরচের একটা অংশ।

৫. ক্যাশব্যাক ক্রেডিট কার্ড

আপনি প্রতিটি লেনদেনে ক্ষেত্রে আপনি ক্যাশব্যাক সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।

৬. লো ইনকাম ক্রেডিট কার্ড

যাদের বেতন কম তারা হয়তো মন খারাপ করতে পারেন ক্রেডিট কার্ড উঠাতে না পারায়। তবে মন খারাপের কিছু  নেই।

যাদের বেতন ২৫ হাজার টাকার নিচে তারা লো ইনকাম ক্রেডিট কার্ড এর জন্য আবেদন করতে পারেন।

৭. ফুয়েল ক্রেডিট কার্ড

আপনার গাড়ির জ্বালানি খাত থেকে আপনি এই ফুয়েল ক্রেডিট কার্ড থেকে একটা ছাড় পাবেন। এক্ষেত্রে আপনি ছাড়টা ক্যাশব্যাক, ডিসকাইন্ট অথবা রিভার পয়েন্টের মাধ্যমে পেতে পারেন।

৮. এন্টারটেইনমেন্ট ক্রেডিট কার্ড

আপনি বিনোদন মুলক খরচের ক্ষেত্রে এন্টারটেইনমেন্ট ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে আপনি একটা বড় ধরনের সুযোগ পাবেন।

যেমন, মুভি বা কনসার্ট অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে। আপনাকে রিওয়ার্ডস পয়েন্টের মাধ্যমে ছাড়টা দেওয়া হবে। 

৬. ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করার উপায় কি ?

অনেকে ক্রেডিট কার্ড থাকায় কোন চিন্তাভাবনা ছাড়াই খরচ করে থাকেন। এবং নিজেকে অতিরিক্ত খরচ করা থেকে বিরত রাখতে পারছেন না।

তারা ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করে নিজেকে সংযত রাখতে পারেন। ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করতে হলে আপনাকে ব্যাংকের কাস্টম কেয়ারের নাম্বারে ফোন দিতে হবে।

তাছাড়া সরাসরি ব্যাংকে গিয়েও আপনি ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করার আবেদন করতে পারবেন। এছাড়াও ই-মেইল অথবা অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড বন্ধের আবেদন করতে পারবেন।

৭. ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা উঠানোর নিয়ম ।

ক্রেডিট কার্ড যদিও নগদ টাকার বিকল্প। তারপরও আপনি সব ধরনের ক্রেডিট কার্ড থেকে নগদ টাকা উঠাতে পারবেন না।

ব্যাংক অথবা কোম্পানি যদি  ক্যাশ অ্যাডভান্সড নামের বিশেষ প্রক্রিয়ায় আপনাকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে থাকে।

তাহলে আপনি ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা উঠাতে পারবেন। তবে, প্রথমত ক্রেডিট কার্ড টাকা থেকে টাকা উঠাতে হলে আপনাকে ক্রেডিট কার্ড মেশিন ব্যবহার করতে হবে।

অথবা এটিএম মেশিনের সাহায্যে টাকা উঠাতে পারবেন। অথবা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড থেকে ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করে টাকা উঠাতে পারবেন।

অথবা ক্যাশ ডিপোজিট ভেঙ্গে ও ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা উঠাতে পারবেন। কিন্তু আপনি সরাসরি বিকাশ, নগদ অথবা রকেট এর মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা উঠাতে পারবেন না।

পরিশেষে বলবো:

উপরে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা  করলাম। পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত নানান গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনা করলাম ।

আশাকরি আপনি অনেক উপকার পেয়েছেন । লেখা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।

FAQ

ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কি কি কেনা যায় ?

ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সব কিছুই কেনা যায় । অর্থাৎ শপিং করতে পারবেন , হোটেল বুকিং দিতে পারবেন এবং দেশের বিভিন্ন বাসে, ট্রেনে ও অন্যান্য গাড়ি বুকিং করতে পারবেন । পাশাপাশি বিমানের টিকিট ক্রয় করতে পারবেন । আশাকরি আপনি বুঝতে পেরেছেন ।

I always like to learn new things and spread them. Therefore, my main goal is to highlight various new topics related to online business, online income, blogging and information technology.

Leave a Comment