রিয়েল এস্টেট ব্যবসা কি ? | রিয়েল এস্টেট ব্যবসা কিভাবে শুরু করতে হয় ?

আপনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা কি এ সম্পর্কে জানতে চান ? পাশাপাশি এ ব্যবসা কিভাবে করতে হয় এ সম্পর্কে জানতে চান ? তাহলে এই আর্টিকেলটি শুধু আপনার জন্য।

সময়ের আবর্তনে জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি হচ্ছে। ফলে বসবাসের জন্য স্থায়ী বাসস্থানের সর্বাধিক প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে।

আর এই বাসস্থানের প্রয়োজন মিটাতে রিয়েল এস্টেট তৈরি হয়েছে। দিন দিন এই ব্যবসার চাহিদা বেড়েই চলছে। আর এই ব্যবসায় অল্প সময়ে দ্বিগুন মুনাফা অর্জন করা যায়। এই কারণে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে চাহিদা পূর্ণ একটি ব্যবসা।

তাই আজ আমি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা কি এবং কিভাবে এ ব্যবসা করতে হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। পাশাপাশি নানান খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তুলে ধরব।

যাতে করে আপনি খুব সহজেই এই ব্যবসাটি করতে পারেন কোন ধরনের প্রবলেম এর সম্মুখীন হওয়া ছাড়াই। তাই অবশ্যই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।

রিয়েল এস্টেট ব্যবসা

Table of Contents

রিয়েল এস্টেট ব্যবসা কি ?

রিয়েল এস্টেট অর্থ হলো আবাসন-সম্পত্তি। বাড়ি , জমি , ফ্ল্যাট  ,  অফিস ইত্যাদি এরকম স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তিকে বিভিন্ন প্রক্রিয়াকরণ এর মাধ্যমে উন্নয়ন সাধন করার পরিকল্পনা করাকে রিয়েল এস্টেট বলা হয়।

এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করে ব্যবসার উদ্দেশ্যে লাভ অর্জনের চেষ্টা করাকে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা বলা হয়।

আর যারা এই পরিকল্পনা করে ও ব্যবসা করে তাদেরকে রিয়েল এস্টেট কোম্পানি বলা হয়। যেমন : একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি কোন একজন জমির মালিকের জমি ক্রয় করে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করল।

তারপর সেই বাড়িকে বিক্রি করে দিয়ে মুনাফা অর্জন করল । অতএব তাদের এই কাজটিকে (তথা : জমি ক্রয় করে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করা ) রিয়েল এস্টেট ব্যবসা হিসেবে আখ্যায়িত হবে। আশা করি আপনি ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন।

রিয়েল এস্টেট ব্যবসা কিভাবে শুরু করতে হয় ?

এই ব্যবসা শুরু করার জন্য অবশ্যই আপনাকে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে। তারপর সে অনুযায়ী প্রত্যেকটি কাজ করতে হবে। অন্যথায় সফলতা কখনো অর্জন করতে পারবেন না। সেই পদক্ষেপগুলো হলো :

  • সঠিক পরিকল্পনা করা।
  • অভিজ্ঞতা অর্জন করা।
  • মূলধন এর ব্যাপারে চিন্তা ফিকির করা।
  • নানান খুঁটিনাটি বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখা
  • একটি অফিস তৈরি করা।
  • এ ব্যবসার নিয়ম কানুন ভালোভাবে জানা
  • রিয়েল এস্টেট  ব্যবসার নিবন্ধন করা।
  • অর্থনীতির উপর পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করা।
  • কোম্পানিকে নিজস্ব একটি ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি করা।
  • মার্কেটিং এর ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া।

এ সমস্ত বিষয়ে লক্ষ্য করে এ ব্যবসা শুরু করতে হবে। নিচে প্রত্যেকটি বিষয় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

                                ১ . ফেসবুকে ব্যবসা করার নিয়ম
    Read more :      ২ . ছাত্রদের জন্য ব্যবসা আইডিয়া
                                ৩.  টাকা ছাড়া ব্যবসা করার পদ্ধতি কি ?

১. সঠিক পরিকল্পনা করুন।

এই ব্যবসার জন্য অবশ্যই আপনাকে সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে। কেননা পরিকল্পনা করে ব্যবসা করলে ১০০% সফলতা পাওয়া যায়।

অতএব আপনি যখন পরিকল্পনা করে ব্যবসা শুরু করবেন তখন ওই ব্যবসার ভালো ও খারাপ দিক ও সুক্ষ সুক্ষ বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা হয়ে যাবে।

আর এই ধারণাই আপনাকে সফলতার দিকে নিয়ে যাবে । তবে যদি পরিকল্পনা ছাড়া ব্যবসা করা হয় তাহলে ব্যর্থতার সম্ভাবনা বেশি রয়ে যায়। আশা করি ভালোভাবে বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

২. ব্যবসা শুরু করার আগে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন।

একটি ব্যবসায় সফলতা লাভের জন্য অভিজ্ঞতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অভিজ্ঞতা ছাড়া কোন কাজেই সফল হওয়া যায় না।

আর অভিজ্ঞতা থাকলে খুব সহজেই সফল হওয়া যায়। এই কারণে প্রথম ছোট ছোট কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করা।

অভিজ্ঞতা অর্জন করার পর পরিপূর্ণভাবে ব্যবসা শুরু করা এবং বড় বড় ইনভেস্ট করে বড় আকারে বিজনেস করা। আসা করি আপনি বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।

৩. ব্যবসা শুরু করার পূর্বে মূলধন নিয়ে চিন্তা ফিকির করা।

এই ব্যবসা করতে গেলে প্রচুর পরিমাণে অর্থ ইনভেস্ট করতে হবে। এজন্য পূর্ব থেকে মূলধনের ব্যবস্থা করতে হবে।

কেননা যদি মূলধনের ব্যবস্থা না করে এবং কোন ধরনের পরিকল্পনা না করে এই ব্যবসা শুরু করে দেন তাহলে আর্থিক সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফলে কাজ বন্ধ করে দিতে হবে। আর এটা ব্যবসার জন্য অনেক ক্ষতিকারক দিক হবে। তাই অবশ্যই মূলধনের যোগান দিয়ে এই রিয়েল এস্টেটের এর ব্যবসা শুরু করতে হবে।

তাহলে খুব সহজেই এই ব্যবসায় সফলতা লাভ করতে পারবেন কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়া।

৪. ব্যবসা শুরু করার পূর্বে নানান খুঁটিনাটি বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখা

একটি ব্যবসার মধ্যে অনেক সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয় থাকে এবং খুঁটিনাটি বিষয় থাকে। যেগুলো  ব্যবসাকে সফল হওয়ার পিছনে অনেক বড় ভূমিকা রাখে।

আর এই খুঁটিনাটি বিষয়গুলো যদি গুরুত্ব সহকারে না দেখা হয় তাহলে অনেক সময় লস এর শিকার হতে হয়। তাই অবশ্যই ব্যবসা করার ক্ষেত্রে এ সমস্ত বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।

৫. অবশ্যই একটি অফিস তৈরি করতে হবে

এই ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য একটি অফিস তৈরি করতে হবে। আর অফিস তৈরি করার জন্য এমন একটি স্থান নির্বাচন করতে হবে যে স্থানে যাতায়াত ব্যবস্থা খুব ভালো থাকে এবং খুব সহজেই পরিচিতি লাভ পাওয়া যায়।

আর এই অফিসটাকে আকর্ষণীয় ভাবে তৈরি করতে হবে পাশাপাশি আকর্ষণীয় ভাবে সাজাতে হবে। যাতে করে গ্রাহকরা আপনার কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়  এবং আপনার কাছ থেকে নানান জিনিস ক্রয় করতে আগ্রহী হয়। আশা করি বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।

৬. ব্যবসা শুরু করার পূর্বে রিয়েল এস্টেট আইন সম্পর্কে ভালোভাবে আয়ত্ত করা।

প্রত্যেকটি ব্যবসার জন্য যেমন নিয়ম রয়েছে ঠিক তেমনি ভাবে এ ব্যবসার জন্য কিছু নিয়ম রয়েছে। অবশ্যই আপনাকে এই নিয়মগুলো ফলো করতে হবে।

  • আপনি যদি জমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করতে চান তাহলে এই ক্ষেত্রে অবশ্যই ভূমির মালিক থেকে পরিপূর্ণভাবে জমির দলিল করে নিয়ে তারপর কাজ শুরু করবেন। যাতে করে ভবিষ্যতে সমস্যা না হয়।
  • আর যদি ভূমির মালিক কে নির্মিত ভবনের কোন অংশ দেয়ার শর্তে বাড়ি নির্মাণ করে থাকেন। তাহলে অবশ্যই এক্ষেত্রে দুপক্ষের লিখিত চুক্তি করতে হবে। পাশাপাশি কতটুকু অংশ দেওয়া হবে এবং কতদিন সময় লাগতে পারে সে বিষয়ে উল্লেখ করতে হবে।
  • প্রত্যেকটি প্রকল্প ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা অনুযায়ী তৈরি করতে হবে। যাতে করে নাগরিকরা কোন ভোগান্তির শিকার না হয় বরং তারা সুবিধা লাভ করে।
  • প্রকল্প শুরু করার পূর্বে অবশ্যই অনুমোদন নিতে হবে। প্রকল্পের অনুমোদন ছাড়া কোন কিছুই বিক্রি করতে পারবে না।
  • প্রত্যেকটি ভবন উন্নয়ন প্রকল্পের দিকে লক্ষ্য করে তৈরি করতে হবে। যাতে করে পানি সরবরাহ , রাস্তাঘাট , বিদ্যুৎ সরবরাহ , গ্যাস সরবরাহ  , টেলিফোন সংযোগ ইত্যাদি এসব ক্ষেত্রে কোন ধরনের প্রবলেম না হয়।

৭. রিয়েল এস্টেট ব্যবসার লাইসেন্স করা

অবশ্যই আপনাকে এ ব্যবসার জন্য নিবন্ধন করতে হবে। অন্যথায় নানান ধরনের ঝামেলায় পড়ার সময় রয়েছে। নিবন্ধনের জন্য অবশ্যই আপনাকে নিম্নে বর্ণিত কাগজপত্র গুলো জোগাড় করতে হবে।

  1. ভ্যাট এর রেজিস্ট্রেশন নাম্বার লাগবে।
  2. ট্রেড লাইসেন্স লাগবে।
  3. ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন সার্টিফিকেট লাগবে।
  4. কারিগরি ব্যক্তিদের যোগ্যতার সার্টিফিকেট লাগবে।
  5. রিয়েল এস্টেট এন্ড হাউসিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সদস্য পদের নিবন্ধন কপি লাগবে।
  6. যদি কোম্পানি থাকে তাহলে মেমোরেনডম অব এসোসিয়েশন এবং আর্টিকেলস অব এসোসিয়েশন  ও  সার্টিফিকেট অব ইন কর্পোরেশন এর এর সার্টিফিকেট লাগবে।

অবশ্যই আপনাকে এই সমস্ত বিষয়গুলো দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার জন্য। অন্যথায় বিভিন্ন রকম ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করি বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।

৮. অর্থনীতির উপর পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করা।

অবশ্যই আপনাকে এই ব্যবসায়ের সফল হওয়ার জন্য অর্থনীতির উপর ভালোভাবে জ্ঞান রাখতে হবে। তথা কোথায় কতটুকু টাকা ব্যয় হচ্ছে। আবার লাভ হচ্ছে কেমন ক্ষতি হবে কিনা এরকম প্রত্যেকটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

অর্থাৎ যখনই কোন একটি প্রজেক্ট নেওয়ার চিন্তা ফিকির করবেন। তখনই আপনাকে এই প্রজেক্টে কত টাকা খরচ হতে পারে ।

পাশাপাশি লাভ হবে কেমন ও ক্ষতি হবে কিনা এ ব্যাপারে অবশ্যই আপনাকে পরিপূর্ণ ধারণা নিতে হবে। অন্যথায় অর্থনীতির দিক দিয়ে মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

৯. কোম্পানিকে নিজস্ব একটি ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি করা।

অবশ্যই আপনার কোম্পানিকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি করতে হবে। যখন ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি হবে তখন আপনার কোম্পানি গ্রাহকদের মাঝে নির্ভরযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে। এতে করে আপনার ব্যবসার সফলতা দ্বিগুন গুনে বেড়ে যাবে।

১০. মার্কেটিং এর ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে 

একটি ব্যবসাকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে মার্কেটিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই অবশ্যই আপনাকে মার্কেটিং এর ব্যাপারে অনেক গুরুত্ব দিতে হবে। মার্কেটিং এর জন্য যে সমস্ত পন্থা অবলম্বন করতে পারেন।

  • আপনার রিয়েল এস্টেট বিজনেসের নাম অনুযায়ী একটি ওয়েবসাইট তৈরি করুন। যাতে করে ওয়েবসাইটের নাম শুনেই গ্রাহকরা বুঝতে পারে যে , এটি একটি রিয়েল এস্টেট ওয়েবসাইট।
  • ওয়েবসাইটের জন্য ভালো মানের এসইও এক্সপার্ট হায়ার করতে হবে। এতে করে খুব সহজেই গ্রাহকদের কাছে পৌঁছতে পারবে।
  • বিপুল প্রচার প্রসারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন। যেমন : facebook , YouTube , instagram ইত্যাদি।
  • সোশ্যাল মিডিয়াতে ফ্রিতে মার্কেটিং করতে পারেন আবার পেইড মার্কেটিং করতে পারেন। পেইড মার্কেটিং করলে সফলতা দ্রুত পাওয়া সম্ভব।
  • পেইড মার্কেটিং এর জন্য ফেসবুক সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। এখানে আপনি পেইড মার্কেটিং করতে পারবেন।

রিয়েল এস্টেট কোম্পানির নাম কি কি ?

বর্তমানে অনেক কোম্পানি রয়েছে। কয়েকটি কোম্পানির নাম দেওয়া হল : 
১. আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ
২. বসুন্ধরা গ্রুপ
৩. নাভানা রিয়েল এস্টেট
৪. আনোয়ার ল্যান্ড মার্ক
৫. রেংস প্রপার্টিজ লিমিটেড

পরিশেষে বলবো : উপরে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে তথ্য দেওয়া হল। অবশ্যই আপনাকে উপরের তথ্য অনুযায়ী প্রত্যেকটি পদক্ষেপ নিতে হবে।

তাহলে আপনি খুব সহজেই এ ব্যবসায় সফলতা লাভ করতে পারবেন। অন্যথায় ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আশা করি আপনি উপকৃত হয়েছেন। অতএব আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।

I always like to learn new things and spread them. Therefore, my main goal is to highlight various new topics related to online business, online income, blogging and information technology.

Leave a Comment