আশুরার ফজিলত ও আমল ২০২২ | আশুরার রোজার ফজিলত কি ?

আপনি কি জানতে চান আশুরার ফজিলত ও আমল সম্পর্কে ? পাশাপাশি এটাও কি জানতে চান আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে ? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।

আশুরা বলতে আমরা মুহররমের 10 তারিখে বুঝে থাকি। মুহররম মাসের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। । কেননা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত আছে এই মুহররম মাসটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। আরবি বৎসরের প্রথম মাস।

পাশাপাশি আশুরারও অনেক ফজিলত রয়েছে । অতএব আজ আমি আলোচনা করব আশুরার ফজিলত সম্পর্কে , পাশাপাশি আশুরার রোজা সম্পর্কেও আলোচনা করব এবং এই দিনে বর্জনীয় বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব।

আরো নানান বিষয় তুলে ধরব এই আশুরার সম্পর্কে। যাতে করে আপনি আশুরা সম্পর্কে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যান। চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।

আশুরার ফজিলত

আশুরার ফজিলত ও আমল

আশুরার অনেক ফজিলত রয়েছে। যেমন রোজা রাখা । নফল নামাজ পড়া ইত্যাদি ।এখানে আমি প্রত্যেকটি ফজিলত আলাদাভাবে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। যাতে করে আপনার বুঝতে সমস্যা না হয়। আশা করি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

আশুরার রোজার ফজিলত

আশুরার রোজার ফজিলত অনেক বেশি। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনেক হাদিস রয়েছে। আমি এখানে কয়েকটি হাদিস বর্ণনা করবো। আশা করি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

আশুরার রোজা সম্পর্কে হাদিস

১. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আমি আশাবাদী আশুরা রোজা রাখার কারণে আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। এই হাদিসটি রয়েছে সহিহ মুসলিম শরীফে এক নম্বর খন্ডে ৩৬৭ পৃষ্ঠা। এবং তিরমিজি শরীফের এক নম্বর খন্ডে ১৫৮ নম্বর পৃষ্ঠা।

২. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান এবং আশুরার রোজার ক্ষেত্রে যেরূপ গুরুত্ব দিয়েছেন অন্য সময় এরকম গুরুত্ব দিতে দেখিনি। এই হাদিসটি রয়েছে বুখারী শরীফের ১ নম্বর খন্ড ২১৮ নাম্বার পৃষ্ঠা।

৩. একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা আশরা রোজা রাখো। আর ইহুদীদের সাদৃশ্য ছেড়ে দিয়ে আশুরার আগের দিন এবং পরের দিন আরো একদিন রোজা রাখ। এই হাদিসটি রয়েছে মুসনাদ আহমদ শরীফের এক নম্বর খন্ড ২৪১ নম্বর পৃষ্ঠা।

৪. একটি হাদিস যেটা হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যদি আমি বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ তারিখে অবশ্যই রোজা রাখব। হাদিসটা রয়েছে মুসলিম শরীফের এক নম্বর খন্ড ৩৫৯ নাম্বার পৃষ্ঠা।

এ সমস্ত হাদিস দ্বারা বুঝা যায় আশুরার রোজার ফজিলত অনেক বেশি। অতএব আমরা আশুরার দিন এবং তার আগের দিন অথবা পরের দিন সর্বমোট দুইটি রোজা রাখার চেষ্টা করব।

আশুরার রোজা কত তারিখ ?

প্রতি বছর মহররমের 10 তারিখে আশুরার রোজা হয়ে থাকে। এই হিসেবে এই বছর ৯ আগস্ট ২০২২ সালে আশুরার রোজা রাখা হবে। আর আপনি যদি পারেন তাহলে আশুরার আগের দিন অথবা পরের দিন একটি রোজা অতিরিক্ত রাখবেন।

আশুরার নামাজ কত রাকাত ?

আশুরার দিন যেহেতু অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনটি অনেক ফজিলতপূর্ণ। অতএব রোজা রাখার সাথে সাথে এই দিনে আপনি নফল নামাজ পড়তে পারবেন।

তবে নফল নামাজ বা আশুরার নামাজের নির্দিষ্ট কোন রাকাত নেই। আপনি যা ইচ্ছা যত রাকাত ইচ্ছা নামাজ পড়তে পারেন। আশা করি এ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।

আশুরার নামাজের নিয়ত

আশুরার নামাজের নির্দিষ্ট কোন নিয়ত নেই। অন্যান্য নামাজের মত স্বাভাবিকভাবে নিয়ত করতে পারেন। এভাবে নিয়ত করতে পারেন : আমি আল্লাহর ওয়াস্তে ক্যাবলামুখী হইয়া আশুরাকে উপলক্ষ করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ছি। এরকমভাবে নিয়ত করতে পারবেন।

আশুরার নামাজের নিয়ম

আশুরার নামাজের নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। আপনি যে রকম ভাবে অন্যান্য নামাজ পড়েন ঠিক তেমনিভাবে এই নামাজও পড়বেন। অর্থাৎ আপনি যে রকম ভাবে ফরজ নামাজ , নফল নামাজ, সুন্নত নামাজ পড়েন ঠিক তেমনি ভাবেই আসরের নামাজের ক্ষেত্রে এরকম ভাবেই পড়বেন।

আশুরাকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে কুসংস্কার বিষয়গুলো কি কি ?

আশুরার ফজিলত

বর্তমানে আমাদের সমাজে আশুরাকে কেন্দ্র করে অনেক কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। আমি কয়েকটি কুসংস্কার আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

  • ইয়াকুব আঃ তার জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন এই দিনে
  • ইউসুফ আলাইহিস সালাম জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন এই দিনে
  • হযরত ইউনুস আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দিনে মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।
  • কেয়ামত সংগঠিত হবে এই দিনে
  • হযরত ইদ্রিস আলাইহিস সালামকে আসমানে উঠায় নেওয়া হয়েছে এই দিনে।

এই প্রত্যেকটি বিষয় কুসংস্কার । এগুলোর কোন ভিত্তি নেই। অবশ্যই আমাদেরকে এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।

হুসাইন ( রা: )কে কেন্দ্র করে বাড়াবাড়ি করা

এই দিনে কিছু লোক আছে যারা হযরত হুসাইন(রা:) শাহাদাতকে কেন্দ্র করে নানান রকম বাড়াবাড়ি করে।

  • বিভিন্ন রকম মিছিল বের করে
  • রেলি বের করে
  • তাজিয়া ও শোকগাথা ইত্যাদি পাঠ করে।

আমাদেরকে এ সমস্ত কুসংস্কৃতি থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

কেননা এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন ওই ব্যক্তিদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই যারা কাপড় ছিড়ে , মুখ চাপড়ায় এবং জাহিলি যুগের কথাবার্তা বলে।

অবশ্যই আমাদেরকে সমস্ত কুসংস্কৃতি থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আমাদেরকে এই সমস্ত সংস্কৃতি থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুক।

পরিশেষে বলবো : উপরে আশুরার ফজিলত ও আমল নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো। আশা করি আপনি বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।

তাই অবশ্যই এই দিনকে কেন্দ্র করে রোজা রাখা, বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়া , নফল নামাজ পড়া। আর অন্যায় কাজ ও কুসংস্কৃতি থেকে বেঁচে থাকা। এ লেখাটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।

আরো পড়ুন :-

আশুরার নামাজ কিভাবে পড়তে হয় ?

আশুরাকে উপলক্ষে করে নির্দিষ্ট কোন নামাজ নেই। অতএব আপনি যদি আশুরাকে উপলক্ষে করে নামাজ পড়তে চান তাহলে আপনি নফল নামাজের মত নামাজ পড়বেন। অর্থাৎ যেমনিভাবে আপনি নফল নামাজ আদায় করেন ঠিক তেমনি ভাবে এই নামাজ আদায় করবেন নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই।

Leave a Comment