আপনি সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম সম্পর্কে কি জানতে চান ? তাহলে এই আর্টিকেলটি শুধু আপনার জন্য।
সালাতুল হাজত অর্থাৎ প্রয়োজনের নামাজ। এই নামাজ হলো নফল। মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনের সম্মুখীন হয় নানা কারণে। তখন সাহায্য-সহযোগিতার মুখাপেক্ষী হয়।
এই প্রয়োজনে কেউ আপনাকে সহযোগিতা করে না। এমন পরিস্থিতিতে সালাতুল হাজত নামাজের মাধ্যমে আপনার সেই প্রয়োজন মিটতে পারে বা কষ্ট দূর হয়ে যেতে পারে।
তাই অন্যতম পদ্ধতি হলো এই নামাজ। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও।
আজ আমি সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
যাতে করে আপনি খুব সহজেই আপনার প্রয়োজন পূরণের জন্য সালাতুল হাজত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারেন।
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম | salatul hajat namaz rules in bangla
নামাজের নিয়ম বলার আগে আমি আলোচনা করব সালাতুল হাজত কি , সালাতুল হাজতের ফজিলত কি ইত্যাদি নানান বিষয় তাহলে বিষয়গুলো আপনার কাছে আরও স্পষ্ট হবে।
সালাতুল হাজত কি ?
হাজত অর্থ হল : প্রয়োজন । সালাতুল হাজত হল প্রয়োজনের নামাজ। বৈধ যেকোন প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নফল নামাজ আদায় করাকে সালাতুল হাজত বলে।
দুই রাকাত পড়তে পারেন আবার চার রাকাত পড়তে পারেন। মোটকথা বিপদ আপদের সময় নিজের কষ্ট গুলো কে নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে পেশ করা।
সালাতুল হাজত নামাজের সঠিক সময়
এই নামাজের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। যেকোনো সময় এই নামাজ পড়তে পারবেন। তবে নিষিদ্ধ সময় এই নামাজ পড়তে পারবেন না। এ ব্যাপারে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
সবচেয়ে উত্তম সময় হলো : রাত্রিবেলা ঘুমানোর সময়। তবে ইচ্ছে করলে আপনি শেষ রাত্রে তাহাজ্জুদ নামাজের পরে দুই রাকাত সালাতুল হাজত নামাজ পড়তে পারেন। কেননা এই সময় দোয়া কবুলের সময়। আশা করা যায় খুব দ্রুত আল্লাহতায়ালা কবুল করবেন।
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত
এই নামাযের জন্য আলাদা কোন নিয়ত নেই । অন্যান্য স্বাভাবিক নামাজের মতোই । অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য যেভাবে নিয়ত করে থাকি সেভাবেই নিয়ত করতে হবে।
তবুও নিয়ত বলে দিচ্ছি । নিয়ত : আমি আল্লাহর অয়াস্তে কেবলামুখি হয়ে দুই রাকাত হাজতের নামায পড়ছি । এভাবেই নিয়ত করতে হয়। আশা করি আপনি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
বিস্তারিতভাবে সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম
সালাতুল হাজতের নামাজের ক্ষেত্রে আলাদা কোনো নিয়ম নেই। অন্যান্য স্বাভাবিক নামাজের মতই এই নামাজ। অর্থাৎ এই নামাজের জন্য আলাদা করার সূরা নাই , আলাদা কোনো নিয়ম নেই। আপনি যে কোন সূরা দিয়ে এই নামাজ টি পূর্ণ করতে পারেন।
তবুও আপনাদের সুবিধার্থে হাজতের নামাজ পড়ার নিয়ম বলে দিচ্ছি :
সর্বপ্রথম নামাজের নিয়ত করবেন। নিয়ত আপনি আরবিতে করতে পারেন আবার বাংলাতেও করতে পারেন।
বাংলা নিয়ত :
আমি কেবলা মুখী হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে সালাতুল হাজত নামাজ আদায় করছি। তারপর আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বাঁধবেন। তারপর সানা পড়বেন।
এরপর আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়বেন। এরপর সূরা ফাতিহা পড়বেন। তারপর যে কোন একটি সূরা মেলাবেন।
এরপর রুকু করবেন এবং রুকুর তাসবীহ গুলো পড়বেন । তারপর রুকু থেকে উঠে সামি আল্লাহ হুলিমান হামিদা রব্বানা লাকাল হামদ বলবেন। তারপর সেজদা করবেন।
সিজদার তাসবীহ গুলো পড়বেন। তারপর সেজদা থেকে উঠবেন। এরপর বসবেন। আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়ারহামনি এই দোয়াটি পড়বেন। তারপর আবার সেজদা করবেন।
তারপর দ্বিতীয় রাকাতের জন্য আল্লাহু আকবার বলে উঠে যাবেন। এভাবে প্রথম রাকাত শেষ করবেন।
তারপর আবার দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবেন। বিসমিল্লাহ বলবেন তারপর সূরা ফাতিহা বলবেন।
তারপর যে কোন একটি সূরা মিলাবেন। এরপর রুকু করবেন এবং রুকুর তাসবীহ গুলো পড়বেন ।
তারপর রুকু থেকে উঠে সামি আল্লাহ হুলিমান হামিদা রব্বানা লাকাল হামদ বলবেন। তারপর সেজদা করবেন।
সিজদার তাসবীহ গুলো পড়বেন। তারপর সেজদা থেকে উঠবেন। এরপর বসবেন। আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়ারহামনি এই দোয়াটি পড়বেন। তারপর আবার সেজদা করবেন।
তারপর সেজদা থেকে উঠে শেষ বৈঠক করবেন। এরপরে তাশাহুদ পড়বেন তারপর দুরুদ শরীফ পড়বেন। এরপর দোয়ায়ে মাসুরা পড়বেন। এরপর ডান দিকে সালাম ফিরাবেন তারপর বাম দিকে সালাম ফিরাবেন।
এই পদ্ধতিতে নামায আদায় করবেন । আশাকরি আপনি বুঝতে পেরেছেন ।
আপনি ইচ্ছা করলে চার রাকাত পড়তে পারেন । নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত যেকোনো সময় আপনি নামাজ পড়তে পারেন। নামাজের শেষে বেশি বেশি দোয়া পড়বেন , দুরুদ শরীফ পড়বেন , হামদ সানা ও পড়বেন।
সালাতুল হাজত নামাজের দোয়া
নামাজের শেষে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দুরুদ পাঠ করে এই দোয়াটি করবেন।
আরবিতে দোয়া
বাংলায় উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম সুবহানাল্লাহি রাব্বিয়াল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন। আস্আলুকা মুজিবাতি রহমাতিক ।
অআ’ঝাইমা মাগফিরাতিক অলগনিমাত মিনকুল্লি বির্রীন । আসসালা মাতা মিন কুল্লি ইস্মিন। লা তাদা’লি জাম্বান ইল্লা গাফারতাহ। অলা হাম্মান ইল্লা ফার্রজতাহ । অলা হাজাতান হিয়া লাকা। রিযান ইল্লা ক্বাদাইতাহা । ইয়া আরহামার রাহিমীন।
অতএব আপনি দোয়াটি পড়তে পারেন। পাশাপাশি আপনি আপনার প্রয়োজনের কথা বলবেন । দোয়া করবেন একনিষ্ট মনে একমাত্র আল্লাহর দিকে মনোযোগি হয়ে ।
সালাতুল হাজত নামাজের দোয়ার অর্থ
আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তিনি অনেক সহনশীল ও দয়ালু । তিনি সমস্ত দোষ ত্রুটি থেকে পুত – পবিত্র।
তিনি বিশাল আরশের প্রভু । সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য। তিনি পুরা বিশ্ব জাহানের প্রভু।
আপনার কাছেই একমাত্র আমি চাচ্ছি , আপনার রহমত আকর্ষণকারী সমস্ত ভালো কর্মের ওসিলায় , আপনার ক্ষমা , মাগফিরাত আকর্ষণকারী সমস্ত কাজের বরকত।
সমস্ত ভালো আমলের সাফল্য লাভের এবং সমস্ত গুনাহ থেকে নিরাপত্তা লাভের। আমার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন। সমস্ত সমস্যা সমাধান করে দিবেন।
আর আমার যে সমস্ত প্রয়োজন রয়েছে যাতে আপনি সন্তুষ্ট রয়েছেন সে সমস্ত প্রয়োজন আপনি পুরো করে দিবেন। হে সর্বশ্রেষ্ঠ করুণাময়।
সালাতুল হাজতের ফজিলত
আমাদের নবী হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেকটি প্রয়োজন এক্ষেত্রে নামাজ পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামদেরকে এই নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন। তাহলে বুঝতে পারছেন এ নামাজের কত ফজিলত । এ ব্যাপারে হাদীস রয়েছে।
সালাতুল হাজত নামাজের হাদিস
হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে যখনই কোনো গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন বা বিপদ আপদ আসতে।
তখনই হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গে সঙ্গে নামাজের মধ্যে দাঁড়িয়ে যেতেন।(আবু দাউদ শরীফ)
আর একটি হাদীসে এসেছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে অথবা কোন মানুষের কাছে প্রয়োজন দেখা যায়।
সে যেন ভাল ভাবে ওযু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাম এর উপর দুরুদ পাঠ করে। (তিরমিজি শরীফ)
সালাতুল হাজত নামাজের উপকারিতা
এই নামাজ পড়ার দ্বারা অনেক উপকার রয়েছে। অর্থাৎ আপনি যে উদ্দেশ্যে এই নামাজ পড়বেন সে উদ্দেশ্যটা পূরণ হয়ে যাবে।
যখন আপনি মনোযোগ সহকারে একমাত্র আল্লাহর দিকে ধ্যান করে এই নামাজ আদায় করবেন। আশা করা যায় তখন আপনার উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে।
বর্তমান সময় হলো এমন একটি সময় যে সময় কেউ কারো উপকার করতে চায় না। তাই কখনোই মানুষের দিকে মনোযোগী না হয়ে আপনি সালাতুল হাজত নামাজ পড়ে আপনার মনের আশা , বিভিন্ন প্রয়োজন ইত্যাদি আল্লাহর কাছে যাবেন।
ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আপনার মনের আশা পূরণ করে দিবেন এবং আপনার নানা প্রয়োজন পুরা করে দিবেন।
তবে আপনার মনের আশা পূরণ হওয়ার জন্য শর্ত হলো : একনিষ্ঠ এবং মনোযোগ হয়ে এই নামাজ আদায় করা।
যাতে করে আল্লাহতালা সন্তুষ্ট হয়ে যান। তাহলে আপনার মনের আশা খুব দ্রুত পূরণ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রত্যেকটি মুমিনের উচিত সেজন্য পারিবারিক, সামাজিক ,শারীরিক-মানসিক যে কোন বিপদ আপদ এর ক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন দুশ্চিন্তার ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার কাছে সালাতুল হাজত নামাজ পড়ে দোয়া করা।
এটা আমাদের নবী হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন এবং সাহাবাদেরকে আদেশ করেছেন। অতএব আমাদেরকে সালাতুল হাজত নামাজ পড়া উচিত ।
আরো জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন :
পরিশেষে বলব : উপরে সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
যদি সালাতুল হাজত নামাজ সঠিক নিয়মে পড়তে চান তাহলে অবশ্যই উপরের বিষয়গুলো ফলো করবেন।
যদি লেখাটি ভাল লেগে থাকে এবং উপকার দিয়ে থাকে। তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।
আরো পড়ুন :
সালাতুল হাজত নামাজের FAQ
সালাতুল হাজত নামাজ কত রাকাত ?
সালাতুল হাজত নামাজ দুই রাকাত করে পড়তে হয়। তবে ইচ্ছে করলে চার রাকাতও পড়তে পারেন। এতে কোন সমস্যা নেই। এটা পুরোপুরি নফল নামাজের মত করে পড়তে হয়। আলাদা কোন নিয়ম নেই।
সালাতুল হাজত নামাজ কিভাবে পড়তে হয় ?
সালাতুল হাজত নামাজ পড়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। অন্যান্য নফল নামাজ যেভাবে আদায় করেন ঠিক তেমনি ভাবে এই নামাজও আদায় করবেন। দুই রাকাতও পড়তে পারেন আবার চার রাকাতও পড়তে পারেন।