৬টি পদ্ধতিতে জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় – ২০২৩

আপনি কি জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চান ? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।

মানবদেহের যে সকল রোগের উৎপত্তি হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো জ্বর। যা নবাগত শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ নারী পুরুষ সকলেরই হয়ে থাকে।

জ্বর কোন খারাপ রোগ নয়, মানবদেহে যে কোনো সংক্রমণ বা প্রদাহের বিপরীতে প্রথম প্রতিরোধ ব্যবস্থা হলো জ্বর। 
আমাদের শরীরের স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রা থাকে 98 ডিগ্রি।

শরীরের তাপমাত্রা 99 ডিগ্রী ফারেনহাইটের উপরে গেলে তাকে জ্বর বলে অভিভূত করা হয়। জ্বর হলেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে বা ঔষধ খেয়ে জ্বর কমাতে হবে, বিষয়টি এমন নয়।


শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই, আর সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ খেয়ে ফেলি। অনেকে আরো এক ধাপ এগিয়ে ওষুধের দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ ক্রয় করে খেয়ে ফেলি।

যেটা খুবই খারাপ। কোন ধরনের অসুস্থতায় চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ঔষধ সেবন করা যাবেনা।

জ্বর অতিরক্ত বেড়ে গেলে একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে, কেননা আমাদের শরীরের একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা পর্যন্ত জ্বর নিয়ে প্রতিরোধ করতে পারে।

তাই জ্বর হলেই ঔষধ সেবন করা যাবে না। জ্বর বেশি মনে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। শরীরের তাপমাত্রা মাত্রাতিরিক্ত না হলে বেশ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে শরীরের তাপমাত্রা কমানো সম্ভব। তাই আজ আমি জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ।

জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় সমূহ

উপায় বলার আগে আলোচনা করব জ্বর কেন আসে ? এতে আপনার বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে। পাশাপাশি জ্বর দূর করতে সহায়ক হবে। চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।

জ্বর কেন আসে ?

জ্বর আলাদা ভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ কোন রোগ নয়। অনেক রোগ মাঝে মাঝে প্রকাশ পায় জ্বরের আকৃতিত।

বিভিন্ন কারণে জ্বর হতে পারে। যেমন :

  • বিভিন্ন ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে।
  • আবার অনেক সময় রোগ- জীবাণুর কারণ হতে পারে।
  • সর্দি ও কাশির কারণে জ্বর আসতে পারে।
  • আবার অনেক সময় বেশিক্ষণ রোদে থাকার কারণে জ্বর আসতে পারে।
  • আবার অনেক সময় ব্যাথার কারণে জ্বর আসতে পারে। ইত্যাদি এরকম নানান কারণে জ্বর হতে পারে। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হল : জ্বর এটা শরীরের জন্য খারাপ কিছু নয় বরং উপকারী বিষয়। কেননা যখন আমাদের শরীরে নানা রকম ভাইরাস বা জীবাণু প্রবেশ করে।

তখন আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম ওই জীবনের সাথে সংঘর্ষ করে অটোমেটিক ভাবে। তখন আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

অতএব শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য জ্বরের অনেক ভূমিকা রয়েছে। তবে তাপমাত্রা অতিরক্ত বেড়ে গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১০০% সঠিক পদ্ধতিতে জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় সমূহ :

১. গোসল করা

দূরত্ব শরীরের তাপমাত্রা কমাতে, হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। এতে শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা কমে যাবে। ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা যাবে না কেননা এতে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গে রক্ত ছুটে যাবে ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে ।

অপরদিকে শীতল হয়ে পড়বে ও শরীরে কাপুনি শুরু হবে। অতএব দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা কমাতে কুসুম গরম পানি দিয়ে শাওয়ার নিন।

২. ভেজা কাপড় ব্যবহার

শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে, একটি সুতি কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে নিন। এরপর সেই ভেজা কাপড় দিয়ে আপনার পুরো শরীর কয়েকবার মুছুন।

প্রতি একবার শরীর মোছার পর, সেই কাপড় কে পুনরায় ঠান্ডা পানিতে ভেজা। এরপর আবার শরীর মুছুন। এভাবে কয়েক বার করুন, দেখবেন অতি সহজে শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়েছে।

৩. জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় হলো ভেজা মোজা ব্যবহার করতে পারেন

জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

জ্বর কমানোর ক্ষেত্রে ভেজা মোজা ব্যবহার করতে পারেন। ভেজা মোজা ইমিউন সিস্টেমকে উদ্দীপ্ত করে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে, যা জ্বর কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ব্যবহার পদ্ধতি :
প্রথমে উষ্ণ পানিতে গোসল করে নিন, খুব ভালো করে শরীরকে শুকিয়ে নিন। এরপর এক জোড়া তুলার মজা ঠান্ডা পানিতে ভিজান। এরপর ভালো করে পানি ঝরিয়ে নিন,

এবং মোজা পরিধান করুন, তারপর এই মজার অপর একটি ওলের মোজা পরিধান করুন। দেখবেন অল্প সময়ের মধ্যে শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়েছে।

৪. ঝাল খাবার আহার করা

জ্বর আসলে, বেশি ঝাল যুক্ত খাবার খান।যখন জ্বর আসবে তখন খাবারে বেশি পরিমাণে ঝাল মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করুন, ঝাল মরিচের প্রধান উপাদান হলো ক্যাপসাইসিন। যা শরীর থেকে ঘাম ঝরিয়ে জ্বর কমাতে সাহায্য করে।

৫. দ্রুত জ্বর কমানোর উপায় হলো আদা খাওয়া

আদা জ্বর কমানোর ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। আদাতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, সেইসঙ্গে এটি শরীরের তাপমাত্রাও কমায়।

ব্যবহারবিধি:
আদা কুচি কুচি করে কেটে, ফুটন্ত গরম পানির মধ্যে চার থেকে পাঁচ মিনিট ফোটাতে হবে। এরপর ওই আদার পানি ছায়ার মত করে খেতে হবে। গরম গরম খেতে হবে যার ফলে শরীর থেকে ঘাম ঝরে, ঘাম ঝরানোর কারণে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাবে এতে তাপমাত্রা কমে যাবে।

৬. তুলসী পাতা খাওয়া

তুলসী পাতা তে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিবায়োটিক উপাদান যা শরীরের মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। 
ব্যবহারবিধি:

  • পর্যাপ্ত পরিমাণ তুলসী পাতা তার সঙ্গে সমপরিমাণ অথবা তার চেয়ে বেশি পানি মিশ্রিত করে গরম করুন
  • এরপর পানি খেয়ে ফেলুন। এতে‌ অতি দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা কমে যাবে।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন ?

জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

  • সব সময় ঘরোয়া পদ্ধতিতে জ্বর বা শরীরের তাপমাত্রা কমে যাবে বিষয়টি এমন নয়। অনেক পরিস্থিতিতে আপনাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে:
  • জ্বর যদি তিন দিনের বেশি সময় স্থায়ী হয়।
  • জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ফলে যদি পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
  • যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল অথবা কেমোথেরাপি চলতে তাদের জ্বর 104 f এর বেশি হলে।
  • মাত্রাতিরিক্ত অলসতা বা শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হয়।
  • তিন মাসের কম বয়সি শিশুর যদি 104 f বেশি জ্বর হয়।‌ তখন কোন প্রকার দেরি না করে , কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে সাক্ষাৎ করুন।

পরিশেষে বলব : উপরে জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বলা হয়েছে । আপনি যদি এগুলা ফলো করেন । তাহলে ইনশাআল্লাহ জ্বর কমে যাবে ।

আরো পড়ুন : দাঁতের ব্যথা কমানোর উপায়

FAQ

জ্বর কত দিন থাকে ?

সাধারণ জ্বর হলে দুই থেকে তিন দিন শরীরে থাকে। এরপর ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসার মাধ্যমে জ্বর চলে যায়। আবার অনেক সময় এমনিতেই চলে যায় কোন ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই ।

ভাইরাস জ্বর কত দিন থাকে ?

স্বাভাবিকভাবে ভাইরাস জ্বর ৫-৭ দিন থাকে। আর এই জ্বরের সময় শরীরের নানান স্থানে ব্যথা হয়। পাশাপাশি কাশি ,  গলা ব্যথা ,  নাক দিয়ে পানি বের হতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে ?

স্বাভাবিকভাবে তিন থেকে ১৫ দিনের মাঝে ডিঙ্গু জ্বরের নানান রকম উপসর্গ দেখা দেয় এবং দুই থেকে সাত দিনের মাঝে স্বাভাবিকভাবে চিকিৎসার দ্বারা ডেঙ্গু জ্বর চলে যায়। তবে মারাত্মক রূপ ধারণ করলে দীর্ঘদিন যাবত ডেঙ্গু জ্বর শরীরে থাকে।

কত ডিগ্রি জ্বর হলে মানুষ মারা যায় ?

স্বাভাবিকভাবে যখন একজন মানুষের ১০৭ থেকে ১০৮ ডিগ্রি জ্বর হয় তখন সে বাঁচে না বরং সে মারা যায়। তবে ভাগ্য ভালো থাকলে এর থেকে বেশি হলেও সে বাঁচতে পারে।

৯৯ কি জ্বর ?

৯৯ ডিগ্রি তাপমাত্রাকে জ্বর বলা হয় না। চিকিৎসকরা  ১০০ ডিগ্রি এর উপর থেকে জ্বর হিসেবে নির্বাচন করে থাকেন।

I always like to learn new things and spread them. Therefore, my main goal is to highlight various new topics related to online business, online income, blogging and information technology.

Leave a Comment