ঘরোয়া ৭টি পদ্ধতিতে দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায়

আপনি হাই প্রেসার কমানোর উপায় কি এ সম্পর্কে জানতে চান ? তাহলে এই আর্টিকেলটা শুধু আপনার জন্য।

হাই প্রেসার একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, এটার আবির্ভাব তখনই ঘটে, যখন রক্তের একাধিক চাপ ধমনীতে পরে, এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

হৃদযন্ত্র দৈনিক যত বেশি রক্ত সরবরাহ করে, ধমনী তত সরু হয়ে যায়, এবং তাতে চাপ পড়ে , তখন হাই প্রেসার ওঠে, যেটা কে উচ্চ রক্তচাপ‌ও বলে।

বিশ্বজুড়ে হাই প্রেসার বা হাই ব্লাড প্রেসার একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও বিপুল পরিমাণ মানুষ এই হাই ব্লাড প্রেসারে ভুগে থাকেন‌‌।

বাংলাদেশের 2017- 2018 সালের জরিপ অনুযায়ী; বাংলাদেশের প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রতি চারজনের একজন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ বলছে বিশ্বের প্রায় দেড়শ কোটি মানুষ এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। আর এই সমস্যায় প্রতিবছর প্রায় 70 লক্ষ মানুষ মারা যায়।

আজ আমরা হাই প্রেসার কমানোর উপায় কি এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। সুতরাং এ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে আপনি এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন।

হাই প্রেসার কমানোর উপায়

হাই প্রেসার কমানোর উপায় কি ?

উপায় জানার আগে প্রথমেই আমরা জানব হাই ব্লাড প্রেসার হওয়ার কারণসমূহ । যাতে করে খুব সহজেই হাই প্রেসার কমানো যায় ।

হাই ব্লাড প্রেসার হওয়ার কারণসমূহ:

  • মাত্রাতিরিক্ত চিন্তা
  • ঘুম না হওয়ার কারণে
  • অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে
  • অতিরিক্ত মদ্যপান
  • অতিরিক্ত গরমের কারণে

হাই প্রেসার এর লক্ষণ কি কি ?

হাই প্রেসারে আক্রান্ত হওয়ার আলামত সমূহ নিম্নরূপ:

  • শ্বাস নিতে কষ্ট হাওয়া
  • বেশি উত্তেজিত হলে জ্ঞান হারিয়ে যাওয়া ‌
  • দৃষ্টি ঝাপসা ঝাপসা দেখা
  • তিব্র মাথাব্যথা
  • ঘাড় ব্যথা
  • মাঝে মাঝে কানে শব্দ হাওয়া
  • অল্পতেই রেগে যাওয়া
  • অস্থির হয়ে শরীর কাঁপতে থাকা
  • বমি বমি ভাব
  • মাথা ঘোরানো
  • মাথা গরম হয়ে যাওয়া

হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হলে, যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন সেগুলো হলো এই:

  • হার্ট অ্যাটাক
  • কিডনি নষ্ট হওয়া
  • মস্তিষ্কে স্ট্রোক
  • রেটিনায় মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে অন্ধত্ববরণ হয় যাওয়া
  • হৃদপিণ্ডের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া

হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় সমূহ :

হাই প্রেসার কমানোর উপায়

কিভাবে আপনি ঘরোয়া পদ্ধতিতে হাই ব্লাড প্রেসার কমাবেন ,সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক

১. লবণের মাত্রা কমিয়ে দাওয়া

হাই প্রেসারের সমস্যায় আক্রান্ত হলে অথবা হাই প্রেসার সমস্যা আক্রান্ত হওয়া থেকে সুরক্ষিত থাকতে চাইলে, আপনাকে খাবারের মধ্যে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। লবণের মধ্যে থাকা সোডিয়াম রক্তের জলীয় অংশ বাড়িয়ে দেয়, ফলে শরীরে রক্তের আয়তন ও চাপ বৃদ্ধি পায়।

২. দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা

রক্তের চাপ থেকে রক্ষা পেতে চাইলে আপনাকে দৈনন্দিন ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়াম শুধু হাই প্রেসার‌ই নয় বরং ব্যায়াম শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

ব্যায়াম করার দ্বারা অনেক রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যেমন: পেটের মেদ বৃদ্ধি পায় না, মন ভালো থাকে, শরীর বিকশিত হতে থাকে আরো ইত্যাদি উপকারিতা রয়েছে। তাই দৈনন্দিন একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যায়াম করুন।

৩. নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিহার করা

হাই প্রেসার থেকে সুরক্ষা পেতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে ,আপনাকে সব রকমের নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিহার করতে হবে।

নেশাজাতীয় দ্রব্য শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। অ্যালকোহল প্রায় 16 শতাংশ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। ধূমপান শরীরের বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে ধমনী ও শিরায় বিভিন্ন রকমের রোগের আবির্ভাব হয়।

৪. হাই প্রেসার কমানোর উপায় হলো খাবারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা

শুধু হাই ব্লাড প্রেসার নয় বরং শরীরকে সুস্থ রাখতে, সর্বাবস্থায় খাবারের প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করা অতি আবশ্যক। মাংস, বাটার, ফাস্টফুড, অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার, অত্যাধিক তেল দিয়ে তৈরি খাবার

এবং যে সকল খাবারে রক্ত বৃদ্ধি পায়, সে সকল খাবার পরিহার করা অতি আবশ্যক। অতিরিক্ত কোলেষ্টর যুক্ত খাবার খেলে রক্তে চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে সর্বদা সর্ব অবস্থায় খাবারের প্রতি সর্তকতা অবলম্বন করা।

৫. রসুন

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এমন একটি জিনিস হল রসুন। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে দৈনন্দিন সকালে খালি পেটে এক থেকে দুই কোয়া রসুন চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন। এতে রক্তচাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৬. পটাশিয়াম খাবার গ্রহণ করা

যারা উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় আক্রান্ত তারা বেশি বেশি পটাশিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন। পটাশিয়াম জাতীয় খাবার রক্তচাপ কমানোর খুবই কার্যকরী। পটাশিয়াম জাতীয় খাবার যেমন কলা, বাদাম , পালং শাক, কিসমিস টমেটো, আলু,দই, এভোক্যাডো ইত্যাদি খাবার।

৭. চা পান করা

আপনারা যারা উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় আক্রান্ত তারা চা পান করুন। একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে চা পানের ফলে রক্তচাপ কমে যায়। অনুরূপ গ্রিন ( টি ) অথবা ব্ল্যাক ( টি ) যেটাই পান করুন না কেন রক্তচাপ কমাবে। তবে কফি পান করা সীমিত করতে হবে।

গবেষকরা জানান কফি পানের তিন ঘন্টা পর্যন্ত রক্তচাপ বাড়তে পারে। কফি পানের ক্ষেত্রে যারা উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় আক্রান্ত দ্বারা তাদেরকে পরিমিত বোধের পরিচয় দিতে হবে।

হাই প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিত ?

হাই প্রেসার কমানোর উপায়

হাই প্রেসার কমানোর খাবার অনেক ধরনের রয়েছে । নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরছে ।

১. নিয়মিত তাজা তাজা ফল খেতে হবে । কেননা ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন যেটা শরীরকে সুস্থ রাখে। যেমন : 

  • পেঁপে
  • কমলালেবু
  • কলা
  • আমলকি
  • নাশপাতি 
  • আপেল
  • লেবু
  • ডালিম
  • আম ইত্যাদি এজাতীয় তাঁজা ফল খেতে হবে।

২. প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে। শাকসবজি আমাদের শরীরকে সতেজ করে তোলে এবং প্রেসারকে কন্ট্রোলে রাখে।

  1. লাউ
  2. বেগুন
  3. পালং শাক
  4. টমেটো
  5. শসা
  6. ফুলকপি
  7. মটরশুটি
  8. বাঁধাকপি
  9. কুমড়া
  10. ঢেঁড়স
  11. লাল শাক
  12. কলমি শাক ইত্যাদি এ ধরনের খাবার প্রতিদিন খেতে হবে।

৩. প্রতিদিন সম্ভব হলে মাছ খেতে হবে। মাছের মধ্যে রয়েছে অনেক উপকারিতা।

৪. প্রতিদিন পটাশিয়াম খাবার বেশি পরিমাণ খেতে হবে। কেননা পটাশিয়াম জাতীয় খাবার শরীরের রক্তচাপকে কন্ট্রোলে রাখে। যেমন : 

  • শাক সবজির মধ্যে রয়েছে অনেক পটাশিয়াম।
  • ডাবের পানির মধ্যে রয়েছে।
  • কলা ইত্যাদি এই সমস্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম।

র্বশেষে বলব : হাই প্রেসার কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যদি আপনাদের লেখাটা ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।

আরো পড়ুন : 

FAQ

হাই প্রেসার হলে কি কি সমস্যা হয় ?

নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে । যেমন :
১. অল্পতেই রেগে যাওয়া
২. অস্থির হয়ে শরীর কাঁপতে থাকা
৩. বমি বমি ভাব
৪. মাথা ঘোরানো
৫. মাথা গরম হয়ে যাওয়া
৬. শ্বাস নিতে কষ্ট হাওয়া
৭. বেশি উত্তেজিত হলে জ্ঞান হারিয়ে যাওয়া ‌
৮. দৃষ্টি ঝাপসা ঝাপসা দেখা
৯. তিব্র মাথাব্যথা
১০. ঘাড় ব্যথা
ইত্যাদি এরকম সমস্যা দেখা দিতে পারে ।

উচ্চ রক্তচাপ কি লক্ষণ ও কারণ ?

নানান কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে । যেমন :
১. মাত্রাতিরিক্ত চিন্তা
২. ঘুম না হওয়ার কারণে
৩. অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে । ইত্যাদি এসব কারণে হতে পারে ।
উচ্চ রক্তচাপ এর নানান লক্ষণ রয়েছে । যেমন :
১. ঘাড় ব্যথা
২. তিব্র মাথাব্যথা
৩. বমি বমি ভাব
৪. দৃষ্টি ঝাপসা ঝাপসা দেখা
৫. মাথা গরম হয়ে যাওয়া
ইত্যাদি এরকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে ।

হাই প্রেসার হলে কি করা উচিত ?

হাই প্রেসার হলে সর্বপ্রথম খাবারের প্রতি ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। অপুষ্টিকর খাবার থেকে বেঁচে থাকতে হবে।নিয়মতান্ত্রিক ব্যায়াম করতে হবে। মোটেও টেনশন করা যাবেনা। এ সমস্ত বিষয় খেয়াল করলে  প্রেসার কন্ট্রোলে থাকবে।

হাই প্রেসার কত ?

স্বাভাবিকভাবে যদি রক্তের চাপ ১৪০/৯০ থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার হাই প্রেসার রয়েছে। আর যে সমস্ত ব্যক্তিদের বয়স ৮০ অথবা তার থেকে বেশি তাদের ক্ষেত্রে ১৫০/৯০ যদি থাকে তাহলে বলা হবে তাদের হাই প্রেসার রয়েছে।

I always like to learn new things and spread them. Therefore, my main goal is to highlight various new topics related to online business, online income, blogging and information technology.

Leave a Comment