ডায়াবেটিস কমানোর উপায়  | ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

আপনি কি জানতে চান ডায়াবেটিস কমানোর উপায় ? মানবদেহে যে সকল রোগের উৎপত্তি হয়ে থাকে তার মধ্যে থেকে অন্যতম একটি রোগ হল ডায়াবেটিস । যেটা প্রায় ৭০% মানুষের হয়ে থাকে।

আজ আমি ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।  আশাকরি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে ।

ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

আমি কমানোর ৩টি উপায় বলব । পাশাপাশি ডায়াবেটিস কি? সেটা কত প্রকার ? তাদের খাবার কি ? এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি এগুলো ফলো করেন এবং এ অনুযায়ী কাজ করেন তাহলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারবেন ।

ডায়াবেটিস কি ?

আমরা সচরাচর যে সকল খাদ্য গ্রহণ করে থাকি তার শতকরা জাতীয় অংশ পরিপাকের পরে এর সিংহভাগ গ্লুকোজ হিসেবে রক্তে প্রবেশ করে।

আর দেহ কোষ গুলো প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনের জন্য গ্লুকোজ গ্রহণ করে। ম্যাক্সিমাম দেহ কোষ‌ই এই গ্লুকোজ গ্রহণের জন্য ইনসুলিন নামক এক প্রকার হরমোন এর অপর নির্ভরশীল।

আর ডায়াবেটিস হল ইনসুলিনের সমস্যা জনিত রোগ। ইনসুলিন কম বা অকার্যকর হওয়ার কারণে কোষে গ্লুকোজের ঘাটতি হয় এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়তি হয় ,

আর এই সামগ্রিক অবস্থাই হলো ডায়াবেটিস মেলাইটাস। যখন কোন মানুষের রক্তে গ্লুকোজ এর সুনির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করে তখন তাকে ডায়াবেটিসের রোগী হিসেবে অভিভূত করা হয়। 

রক্তে গ্লুকোজ কেন বৃদ্ধি পায় ?

অগ্নাশয় নামক একটি গ্রন্থি থেকে ইন্সুলিন নামে একটি হরমোন নিঃসৃত হয়। এই ইনসুলিন কোন কারনে কম বা ও কার্যকর হলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের সাথে নির্গত হয়ে যায়।

সাধারণত ডায়াবেটিস রোগের জন্য বংশগত ও পরিবেশের অভাব উভয়টি দায়ী। কদাচিৎ কোন কোন বিশেষ গ্রুপ থেকেও ডায়াবেটিস হতে পারে।

শক্তির জন্য দেহে শর্করা, আমিষ ও চর্বি জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন। ডায়াবেটিস হলে শর্করা ও অন্যান্য খাবার সঠিক ভাবে শরীরের কাজে আসে না।

ডায়াবেটিস হলে অগ্নাশয় থেকে প্রয়োজনমতো কার্যকারী ইনসুলিন নামের রহস্য নিঃসরণ হয় না। বা এর কার্যকারিতা হ্রাস তাই বলে দেহে শর্করা, আমিষ ও চর্বি জাতীয় খাদ্যের বিপাক সঠিক হয় না ‌। ডায়বেটিস কোন ছোঁয়াচে বা সংক্রমণ রোগ নয়।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ

ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

সুনির্দিষ্টভাবে ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা যাচাই করতে আমরা ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলো কে দুই ভাগে ভাগ করেছি।
সুনির্দিষ্ট লক্ষণ সমূহ:

  1. যথেষ্ট খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া।
  2. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
  3. ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ করা।
  4. খুব বেশি পিপাসা লাগা।
  5. বেশি ক্ষুধা পাওয়া।

সুনির্দিষ্ট লক্ষণ নয়

  1. চোখে কম দেখা।
  2. ক্ষত শুকাতে লম্বা হওয়া।
  3. খোস পাঁচড়া ফোড়া প্রভৃতি চর্মরোগ দেখা দেওয়া।
  4. বারবার বাচ্চা নষ্ট হওয়া।

ডায়াবেটিস যাদের হতে পারে

যে কেউ যেকোনো বয়সে , যেকোনো সময়, ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে ,তবে বেশকিছু শ্রেণীর মানুষের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা একটু পরিমাণে বেশি তারা হল:

  • যারা শারীরিক কোন পরিশ্রমের কাজ করে না।
  • যাদের ওজন অনেক বেশি।
  • যাদের বংশে মা-বাবা বা রক্তের সম্পর্কিত নিকট আত্বীয়ের ডায়াবেটিস আছে।
  • বহুদিন স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা
  • বহুমূত্র পূর্ব শর্করা আধিক্য।

ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ

ডায়াবেটিস 4 শ্রেণীতে বিন্যস্ত করা হয়েছে
(১) ধরণ-১ (২) ধরণ-২ (৩) বিবিধ কারণ ভিত্তিক শ্রেণী (৪) গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
(১) ধরণ-১: পূর্বে এই শ্রেণীকে ইনসুলিন নির্ভরশীল রোগ বলা হত। এই ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন একেবারেই তৈরি হয় না। সাধারণত 30 বছরের কম বয়সে (গড় বয়স ১০-১২) এ ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যায়।

বেঁচে থাকার জন্য এই সকল রোগীকে ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়। অন্যথায় রক্তের শর্করা অতি দূরত্ব বেড়ে গিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই রক্তে অম্লজাতীয় বিষক্রিয়ায় অজ্ঞান হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া অবস্থায় প্রস্রাবে এসিটোন পাওয়া যায়।

এই ধরনের রোগীরা সাধারণত কৃশকায় হয়ে থাকেন। সৌভাগ্যবশত আমাদের দেশে ইনসুলিন নির্ভরশীল ধরন 1 রোগীর সংখ্যা খুবই কম। এদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস থাকে না।
(২) ধরন -২: এই শ্রেণীর রোগীদের বয়স অধিকাংশ ক্ষেত্রে 30 বছরের উপরে হয়ে থাকে। তবে আজকাল 30 বছরের নিচেও এ ধরনের রোগীর সংখ্যা দেখা যাচ্ছে এবং দিন দিন বেড়েই চলছে।

এদের শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয় তবে প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয় অথবা শরীরের ইনসুলিন এর কার্যক্ষমতা কম। অনেক সময় এই দুই ধরনের কারণ একই সঙ্গে দেখা দিতে পারে।

ইনসুলিন কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার সাথে সাথে এই ধরনের রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থুলকায় হয়ে থাকে। এই ধরনের রোগীদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস পাওয়া যায়।

ইনসুলিন ইঞ্জেকশন না দিলে প্রথম শ্রেণীর রোগীর মত এদের কিটোসিস হবে না। অর্থাৎ এরা ইনসুলিন নির্ভরশীল নয়। অনেক ক্ষেত্রে কোন শারীরিক অসুবিধা অনুভব করেন না বলে এরা চিকিৎসকের কাছে আসেন না।

ফলে বিনা চিকিৎসায় অনেক দিন কাটানোর কারণে বিভিন্ন প্রকার জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে আসেন। অনেক ক্ষেত্রে খাদ্য অভ্যাসের পরিবর্তন এবং নিয়মিত ব্যায়ামের সাহায্যে এদের চিকিৎসা করা সম্ভব।

এই পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হয়। কোন কোন বিশেষ ক্ষেত্রে সামরিক ইনসুলিন প্রয়োজন হতে পারে। 15 থেকে 20 বৎসরের পর অনেককে ইনসুলিন নির্ভরশীল দের মত স্থায়ীভাবে ইনসুলিন দেওয়া লাগতে পারে।

(৩) বিবিধ কারণ ভিত্তিক শ্রেণি

  1. ঔষধ ও রাসায়নিক দ্রব্যের কারণে
  2. কোনো কোনো সংক্রমণ ব্যাধি
  3. অন্যান্য হরমোন আধিক্য
  4. অন্য কোনো প্রতিরোধ ক্ষমতার জটিলতা
  5. অগ্ন্যাশয় এর বিভিন্ন রোগ
  6. জেনেটিক কারণে ইনসুলিন কার্যকারিতা কমে যাওয়া
  7. জেনেটিক কারণে ইনসুলিন তৈরি কম হওয়া

(৪) গর্ভকালীন ডায়াবেটিস: অনেক সময় গর্ভবতী অবস্থায় প্রসূতিদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, আবার প্রস্রাবের পর ডায়াবেটিস থাকে না। এপ্রকার জটিলতাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলা হয়।

গর্ভবতী মহিলাদের ডায়াবেটিস হলে গর্ভবতী, ব্রণ প্রসূতি ও সদ্য প্রসূত শিশু সকলের জন্যই বিপদজনক হতে পারে। বিপদ এড়াবার জন্য গর্ভকালীন অবস্থায় ডায়াবেটিসের প্রয়োজনে ইনসুলিন এর মাধ্যমে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রনে রাখা আবশ্যক।

ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায় না। তবে এই রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ।


১: শৃঙ্খলা বজাই রাখা

শৃঙ্খলা ডায়াবেটিস রোগীর জীবনকাঠি। রোগীকে সকল ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে কয়েকটি বিষয়ের ওপর ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে:

  • নিয়মিত‌ ও পরিমাণমতো সুষম খাবার খেতে হবে
  • নিয়মিত ও পরিমাণমতো দৈহিক পরিশ্রম করতে হবে
  • শরীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে৪. চিকিৎসকের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র সুষ্ঠুভাবে মেনে চলতে হবে
  • পায়ের বিশেষ যত্ন নিতে হবে
  • শারীরিক কোনো অসুবিধা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন কারনেই ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা বন্ধ করা যাবে না

২: ডায়াবেটিস কমানোর উপায় হলো সঠিক খাদ্য অভ্যাস

ডায়াবেটিস হলে খাদ্যের একটি সঠিক নিয়ম মেনে চলতে হবে। খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা ডায়াবেটিস হওয়ার আগে যেরকম থাকে পরেও একই থাকে। পুষ্টির চাহিদা কোন তারতম্য হয় না। নিয়ম মেনে চলার প্রধান উদ্দেশ্য হল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা ,স্বাস্থ্য ভালো রাখা।

খাদ্য গ্রহণের নীতি সমূহ:

  1. চিনি মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে
  2. শর্করা বহুল খাবারগুলো অর্থাৎ চাল, আটা দিয়ে তৈরি খাবার ,মিষ্টি ফল ইত্যাদি হিসাব করে খেতে হবে।
  3. আশবহুল খাবার যেমন ডাল, শাক,সবজি, টক ফল ইত্যাদি বেশি খেতে হবে।
  4. সম্পৃক্ত ফ্যাট যেমন ঘি, মাখন, চর্বি, ডালডা, মাংস ইত্যাদি কম খাওয়া। পরিবর্তে অসম্পৃক্ত ফ্যাট যেমন উদ্ভিদ তেল অর্থাৎ সয়াবিন তেল, সরিষার তেল ইত্যাদি এবং সব ধরনের মাছ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  5. নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে হবে
  6. কোন বেলার খাবার বাদ দেওয়ায় ঠিক নয়
  7. আজ কম কার বেশি এভাবে খাবার খাওয়া যাবেনা।

৩: ডায়াবেটিস কমানোর উপায় হলো ব্যায়াম করা

রোগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে শরীরচর্চার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দৈহিক পরিশ্রম মাংসপেশির জরতা দূর করে এবং রক্ত চলাচলে সাহায্য করে।

ব্যায়াম করলে শরীর সুস্থ থাকে, ইনসুলিন এর কার্যকারিতা ও নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রত্যহ অন্তত 40 মিনিট হাটলে শরীর যথেষ্ট সুস্থ থাকবে। সেটা নিয়মিত একই সময় করলে ভালো হয়।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

সকাল  
খাওয়ার সময় সাতটা থেকে আটটার মধ্যে। আটার রুটি 60 গ্রাম (দুইটা ছোট পাতলা) ডিম একটি, ডাল 10 গ্রাম। সবজি : যে সকল সবজি মাটির ওপরে উৎপাদিত হয় যেমন পালং শাক, লাল শাক, ডাটা শাক, কচু শাক ইত্যাদি। ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁপে, শসা, ঝিঙ্গা ইত্যাদি।

বেলা 11 টায়: মুরি, বিস্কুট, খ‌ই ইত্যাদি 15 গ্রাম।

দুপুর
খাবারের সময় একটা থেকে দুইটার মধ্যে। ভাত 120 গ্রাম (1 কাপ)
মাছ বা মাংস 30 গ্রাম (এক টুকরা)ডাল 15 গ্রাম (একটা পাতলা)সবজি মাটির অপর উৎপাদিত সকল সবজি খেতে পারবে। ইচ্ছে মত।

বিকেল পাঁচটা থেকে ছয়টায় : মুড়ি, বিস্কুট, খ‌ই ইত্যাদি।

রাত
খাবারের সময় আটটা থেকে নয়টাআটার রুটি 60 গ্রাম (দুইটা ছোট পাতলা) বা ভাত 1 কাপমাছ বা মাংস 30 গ্রাম (এক টুকরা)ডাল 15 গ্রাম (এককাপ মাঝারি ঘন)সবজি ইচ্ছে মত।
রাতে খাবার কমপক্ষে এক থেকে দুই ঘন্টা পর এক কাপ দুধ (একশ পঁচিশ মিলি লিটার।) রান্নার জন্য তেল-15 মিলি লিটার।

পরিশেষে বলব : উপরে ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে । উপরে লেখা যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।

আরো পড়ুন : 

I always like to learn new things and spread them. Therefore, my main goal is to highlight various new topics related to online business, online income, blogging and information technology.

Leave a Comment