কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায় ?

আপনি কি মনে মনে কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায় এর উত্তর খুঁজছেন ? জন্ম নিবন্ধন অনেক জরুরী।

জন্ম নিবন্ধন ছাড়া কোন কাজ করা যায় না। অর্থাৎ ভোটার আইডি কার্ড থেকে শুরু করে নানান ধরনের কাজ এই জন্ম নিবন্ধন এর উপর নির্ভরশীল।

অতএব অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। ঘরে বসেই আপনি জন্ম নিবন্ধন করতে পারবেন। আজ আমি কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায় এর উত্তর দিব।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করব। যাতে করে খুব সহজেই আপনি ঘরে বসে জন্ম নিবন্ধন করতে পারেন।

কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায়

কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায় ২০২২

আমি এখানে বিস্তারিতভাবে অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম বলবো। যদি আপনি ফলো করেন তাহলে খুব সহজেই নিবন্ধন করতে পারবেন। অন্যথায় সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কি কি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে আবেদন করার পূর্বে ?

জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থিত রাখতে হবে।

শিশুর বয়স 0 থেকে 5 বছর পর্যন্ত হলে

  • যে হাসপাতালে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে সেই হাসপাতালের ছাড়পত্র বা সার্টিফিকেট লাগবে।
  • যদি বাড়িতে জন্মগ্রহণ করে তাহলে এনজিও কর্মীর নির্দিষ্ট প্রত্যয়ন পত্র লাগবে । যে কর্মী তথ্য সংগ্রহ করেছে ।
  • যদি এটা না থাকে তাহলে জন্ম সংক্রান্ত কোন একটি দলিলের সত্যায়িত লেখা লাগবে।
  • মাতা-পিতার জন্ম নিবন্ধন অথবা তাদের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে।

শিশুর বয়স যদি পাঁচ বছর অথবা এর থেকে বেশি হয়

  • এমবিবিএস ডাক্তারের প্রত্যয়ন পত্র লাগবে বয়সকে প্রমাণিত করার জন্য।
  • স্থায়ীভাবে বসবাসের স্থান বা জন্ম স্থান প্রমাণের জন্য শহর হলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর প্রত্যায়ন পত্র লাগবে। আর গ্রাম হলে মেম্বারের প্রত্যায়ন পত্র লাগবে।
  • এই সমস্ত তথ্য যদি না থাকে তাহলে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সে লেখাপড়া করছে সেখানকার প্রধান শিক্ষকের প্রত্যায়ন পত্র লাগবে।
  • মাতা পিতার জন্ম নিবন্ধন অথবা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে।

কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায় বিস্তারিতভাবে

আবেদন করার জন্য আপনাকে একটি ওয়েবসাইটে যেতে হবে । ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন : //bdris.gov.bd/br/application।

ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর এরকম একটি পেজ পাবেন।

কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায়
কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায়

প্রথম স্টেপ : এখানে আপনি তিনটি অপশন দেখতে পারবেন। জন্মস্থান, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা। সুতরাং আপনি জন্মস্থান নির্বাচন করবেন।

আর যদি শিশুর জন্ম বাংলাদেশের বাইরে হয় তাহলে বাংলাদেশ দূতাবাস অপশন নির্বাচন করুন। তারপর পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন।

দ্বিতীয় স্টেপ : পরবর্তী অপশনে ক্লিক করার পর নতুন একটি ফ্রম দেখতে পারবেন। আপনাকে এই ফরমটি খুব সতর্কতার সাথে পূরণ করতে হবে।

ফরম পূরণ করার নিয়ম : সর্বপ্রথম নাম দিতে হবে । প্রথমেই নামের প্রথম অংশ এবং পরের ঘরে নামের দ্বিতীয় অংশ। বাংলায় লিখতে হবে এরপর ইংলিশে লিখতে হবে।

ইংরেজি লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ইংরেজি বড় হাতের অক্ষর ব্যবহার করবেন। তারপর শিশুর জন্ম তারিখ উল্লেখ করবেন। এরপর শিশুটি পিতা-মাতার কত নাম্বার সন্তান সেটা উল্লেখ করবেন।

এরপর শিশুটি ছেলে না মেয়ে এটা উল্লেখ করবেন। তারপর জন্মস্থানের পরিপূর্ণ ঠিকানা লিখতে হবে। এই সম্পূর্ণ ফরমটি পূরণ করা হলে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন। আশাকরি কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায় এর উত্তর পাচ্ছেন ।

তৃতীয় স্টেপ : পরবর্তী অপশনে ক্লিক করার পর আরেকটি ফরম পূরণ করতে হবে।

এই ফরমটি পূরণ করার নিয়ম হলো : সর্বপ্রথম শিশুর পিতার জন্ম নিবন্ধন এর নাম্বার লিখতে হবে এরপর পিতার নাম বাংলা ও ইংলিশ এ লিখতে হবে। ইংলিশে লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ইংরেজি বড় অক্ষর ব্যবহার করতে হবে।

তারপর পিতার ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার এবং জাতীয়তা উল্লেখ করবেন। তারপর এই পদ্ধতিতেই শিশুর মায়ের জন্ম নিবন্ধন ও নাম এবং আইডি কার্ডের তথ্য ও জাতীয়তা দিয়ে অপর 4টি ঘর পূরণ করতে হবে। পিতা-মাতার এ সমস্ত তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করা হলে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন।

চতুর্থ স্টেপ : পরবর্তী অপশনে ক্লিক করার পর আরেকটি ফর্ম আসবে। এই ফর্ম আপনি আপনার ঠিকানা দিয়ে পূর্ণ করবেন।

ফরম পূরণ করার নিয়ম : এখানে একটি অপশন আসবে সেটা হলো আপনি কি নিম্নলিখিত কোন ঠিকানায় স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করতে চান ? যদি আপনি কোনটি নয় বাছাই করেন তাহলে ঠিকানা দেওয়ার জন্য নতুন আরেকটি পেজ আসবে।

আপনার জন্মস্থান এর ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই রকম হলে জন্মস্থান এর ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই এই অপশন সিলেক্ট করুন।

এই অপশনে ক্লিক করলে আপনার তথ্যগুলো অটোমেটিকভাবে চলে আসবে। অন্যথায় আপনাকে নতুন ভাবে লিখতে হবে। এই ঠিকানা গুলো পূরণ হয়ে গেলে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন। আশাকরি কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায় এর উত্তর পাচ্ছেন ।

পঞ্চম স্টেপ : পরবর্তী অপশনে ক্লিক করার পর নতুন একটি ফর্ম আসবে। এখানে আবেদনকারীর তথ্য দিন।

নিবন্ধনকারীর সাথে আবেদনকারীর কি সম্পর্ক সেটা উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি আবেদনকারীর ইমেইল ও ফোন নাম্বার দিতে হবে। তারপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।

ষষ্ঠ স্টেপ : পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পর আপনার সমস্ত তথ্য পুনরায় দেখাবে। দ্বিতীয়বার আপনি সমস্ত তথ্য আবার চেক করবেন। যদি কোন ভুল না হয় তাহলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে ফেলুন।

৭ম স্টেপ : সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পর আপনাকে একটি নাম্বার দেওয়া হবে। এ নাম্বারটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

এই নাম্বারের মাধ্যমে আপনি জন্ম নিবন্ধন চেক করতে পারবেন। অবশ্যই আপনি এই নাম্বারটি সংরক্ষণ করুন।

ভালোভাবে সংরক্ষণের জন্য আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে রাখতে পারেন। আশাকরি কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায় এর উত্তর পেয়ে গেছেন ।

জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার 15 দিন পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং আবেদন পত্রের ঐ নাম্বারটি নির্দিষ্ট কার্যালয়ে বা অফিসে জমা দিতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন ফি ২০২২

বয়সদেশবিদেশ
0 থেকে শিশুর ৪৫ দিন পর্যন্তফ্রীফ্রী
জন্মের ৪৫ দিন থেকে নিয়ে পাঁচ বছর পর্যন্ত25 টাকা1 ডলার
পাঁচ বছরের পর থেকে50 টাকা1 ডলার
কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায় ?

পরিশেষে বলব : যদি প্রত্যেকটি স্টেফ ভালো করে ফলো করেন। তাহলে কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই আবেদন করতে পারবেন। অন্যথায় প্রবলেম এ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপরে কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।

আরো পড়ুন : জন্ম নিবন্ধন সংশোধন অনলাইন

জন্ম নিবন্ধন যদি না থাকে অনলাইনে তাহলে কি করতে হবে ?

যদি জন্ম নিবন্ধন বাস্তবেই অনলাইনে না থাকে । তাহলে এ ক্ষেত্রে করণিয় হলো নতুনভাবে আবেদন করতে হবে জন্ম নিবন্ধন এর জন্য ।

একাধিকবার একজন ব্যক্তি কি জন্ম নিবন্ধন করতে পারবে ?

একাধিকবার জন্ম নিবন্ধন করতে পারবে না একজন ব্যক্তি । যদি করে তাহলে তার জন্য শাস্তি রয়েছে।

জন্ম নিবন্ধন করার সময় শিশুর পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন না থাকলে কি করনীয়

2021 সালে নতুন একটি আইন হয়েছে যে , 2001 সালের পর জন্মগ্রহণকারী শিশু বা সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে হলে পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন অবশ্যই থাকতে হবে। পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন না থাকলে তার সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে পারবে না।

Leave a Comment