আপনি কি শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান ? তাহলে এই আর্টিকেলটি শুধু আপনার জন্য।
শবে মেরাজ আসলে উদ্বিগ্নের সৃষ্টি হয়। এবং নামাজ ও বিভিন্ন আমাল সম্পর্কে আমাদের মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে ।
পাশাপাশি আমাদের সমাজে শবে মেরাজকে ঘিরে নানান ধরনের মতপার্থক্য পাওয়া যায়। এবং আমলের ক্ষেত্রে অনেক বাড়াবাড়ি করা হয়। ফলে সাধারণ মানুষ অনেক বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে।
আজ আমি শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে সঠিক বিষয় জানাবো দলিল- প্রমাণের সাথে।
পাশাপাশি সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ম বিষয় তুলে ধরবো। যাতে করে সকলের কাছেই স্পষ্ট হয়ে যায়।কোন ধরনের সংশয় না থাকে ।
শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম
এখানে আমরা আলোচনা করব শবে মেরাজে নামাজ আছে কিনা নেই ? যদি থাকে তাহলে কত রাকাত ? এবং শবে মেরাজের ফজিলত কি? ইত্যাদি ।
নামাজ সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে শবে মেরাজ কি ? তাই আগে শবে মেরাজ কি ? এ নিয়ে আলোচনা করা হলো ।
আরো পড়ুন :
শবে মেরাজ কি ?
এটি একটি ফারসি শব্দ। শব অর্থ রাত্রি। মেরাজ অর্থ ঊর্ধ্ব গমন। এই হিসেবে আমরা বলতে পারি ঊর্ধ্ব গমনের রাত্রি।
এই রাত্রিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা সাত আসমানের উপরে নিয়ে গিয়েছিলেন।
এইজন্য এ রাত্রে কে শবে মেরাজ বলা হয়। এ শবে মেরাজ কোন রাত্রিতে সংঘটিত হয়েছিল তা সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণিত নাই।
তবে বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশের মতে রজব মাসের ২৭ তারিখে শবে মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল।
শবে মেরাজের নামাজের নিয়মাবলী
সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত আকিদা
মেরাজ উপলক্ষে আমাদের সমাজে শবে মেরাজের কিছু নামাজ এবং রোজা প্রসিদ্ধ আছে। যেমন বারো চাঁদের ফজিলত নামক কিতাবে আছে ,
শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম হলো মেরাজের রাত্রে দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার পড়ে তিনবার করে সূরা ইখলাস পাঠ করবে এবং ২০০ বার দরুদ শরীফ পাঠ করবে দুই রাকাত পর পর ।
এরপর দোয়া করবে। তাহলে অনেক সওয়াব পাবে যে পড়বে এবং তার ঈমান হবে মজবুত । এবং আল্লাহর রহমত তার উপর বর্ষিত হইবে। এরকম অনেক ধরনের নামাজের কথা বিভিন্ন জায়গায় বর্ণিত আছে।
শবে মেরাজের রোজা
সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত আকিদা
27 রজব রোজা রাখার অনেক ফজিলত রয়েছে। 27 তারিখে রোজা রাখলে 10 বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়
অর্থাৎ এই রোযাতে 10 বছরের গুনাহের কাফফারা স্বরূপ হয়। আরেক জায়গায় বর্ণিত আছে 27 তারিখে রোজা রাখা শত বছরের রোজার সমান।
শবে মেরাজের নামাজের নিয়ত
শবে মেরাজের যেহেতু নির্দিষ্ট কোন নামাজ নাই। তাই এর কোন নির্দিষ্ট নিয়ত নেই। তবে যদি আপনি নামাজ পড়তে যান তাহলে অন্যান্য দিনের মতো নফল নামাজ পড়তে পারেন। এই হিসেবে আপনি নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করতে পারেন ।
আরো পড়ুন :
শবে মেরাজের নামাজ ও রোজা সম্পর্কে বড় বড় আলেমদের বক্তব্য:
অর্থাৎ শবে মেরাজে নামাজ ও রোজা আছে কিনা নাই ? এ ব্যাপারে বড় বড় ওলামায়ে কেরামরা যে বক্তব্য দিয়েছেন সেগুলো নিম্নে বলা হলো :
নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম থেকে বর্ণিত নয় এ ধরনের কোন নামাজের কথা ও রোজার কথা । পাশাপাশি সাহাবায়ে কেরাম থেকে এ ধরনের কোনো কিছু সঠিক ভাবে প্রমানিত নয় । এসব কিছু-ই মানুষের বানানো বিষয়।
এ ব্যাপারে দলিল :
- আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলী রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন : রজব মাসের বিশেষ কোন নামাজ সহিহ ভাবে প্রমাণিত নয় (লাতায়িফুল মায়ারিফ , পৃষ্ঠা ১৬৪)
- বিখ্যাত মুহাদ্দিস হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ সম্পর্কে বলেন রজব মাসের মর্যাদা এবং এই মাসে রোজা রাখা এবং এই মাসের বিশেষ কোন রাত্রে নামাজের ফজিলত সম্পর্কে দলিল যোগ্য হাদিস নেই। এমনটা দৃঢ়তার সাথে আমার পূর্বে বলেছেন ইমাম আবু ইসমাইল আল হারাওয়ী। আমরা তার থেকে সহীহ সনদে এমনটা বর্ণনা করেছি। (তাবয়িনুল আদাব বীমা ওয়ারাদা ফি শরহী রজব।পৃষ্ঠা: ২)
- হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী এখানে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন : যে রজব মাসের বিশেষ কোন রাতের ফজিলত সহি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। সুতরাং আমাদের দেশে যেহুত ২৭ তারিখে শবে মেরাজ হিসেবে মনে করা হয় করা হয় । তাই এই রাতের বিশেষ করে কোন নামাজ প্রমাণিত নয় সহিহ হাদিস দ্বারা ।
- শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে যে কথা বারো চান্দের ফজিলত নামক কিতাবে উল্লেখ আছে : এ সম্পর্কে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাহি বলেন এই সবকিছু জাল ।
রাসূল (সা:) ও সাহাবায়ে কেরাম শবে মেরাজ পালন করেছেন কিনা ?
রাসূল (সা:) ও সাহাবায়ে কেরাম রজব মাসের 27 তারিখে মেরাজ রজনী হিসেবে পালন করেছেন এ ব্যাপারে কোরআন ও হাদিস গবেষণা করার পর কোন কিছুই পাওয়া যায় না।
তাবে তাবেঈন থেকেও এ ব্যাপারে কোন কিছু পাওয়া যায় না। অতএব যে জিনিসটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম ও তাবে-তাবেঈন পালন করেন নাই ইসলামী শরীয়তে সে জিনিসের কোন ভিত্তি নেই।
শবে মেরাজের ফজিলত
এ রাতের আলাদা করে কোনো ফজিলত নেই। তাই ফজিলত মনে করে কোনো ধরনের ইবাদত করা যাবে না। যদি করা হয় তাহলে বিদাআত হবে। তবে অন্যান্য রাতের মত স্বাভাবিকভাবে নফল নামাজ পড়তে পারেন।
শবে মেরাজে করণীয়
এ রাতকে উপলক্ষ করে কোন ধরনের করণীয় বিষয় নেই। যদি এবাদত করতে চান তাহলে স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য রাতের মত এবাদত করতে পারেন ও তাসবিহ তাহলিল পড়তে পারেন এবং পাশাপাশি নফল নামাজ পড়তে পারেন।
শবে মেরাজে বর্জনীয়
- এই রাতকে উপলক্ষ করে হালুয়া মিষ্টি বিতরণ করা যাবে না।
- ফজিলত মনে করে কোন ধরনের নামাজ পড়া যাবে না।
- 27 তারিখ ফজিলত মনে করে রোজা রাখা যাবে না।
- কোন ধরনের আনন্দ উৎসব করা যাবে।
- এই রাতকে ফজিলত মনে করে গোসল করা যাবে না।
- জাঁকজমক অনুষ্ঠান করা যাবে না।
মোটকথা : মেরাজ উপলক্ষ করে শবে মেরাজের বিশেষ নামাজের নিয়ম বা রোজা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত নয় ।
এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উপলক্ষে সাহাবাদের কোন আমল করার নির্দেশ দেননি ।
এ কারণে শবে মেরাজ উপলক্ষ করে কোন আমল করা বেদাআত। কোরআন হাদিসে যেহুত এই রাতের ব্যাপারে কোনো আলোচনা নেই।
তাই নির্দিষ্ট কোন আমলের কথা বলবো না। তাই আমরা এই রাতে অন্যান্য রাতের মতই ইবাদত করতে পারবো।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বিষয় জেনে আমল করার তৈফিক দান করুন । আমিন
পরিশেষে বলব: আশা করি উপরে উল্লেখিত শবে মেরাজের নামাজ সম্পর্কে লেখা আপনাদের ভাল লেগেছে। তাই আপনাদের মূল্যবান কমেন্ট করে আমাদেরকে উৎসাহিত করবেন। ধন্যবাদ।
আরো পড়ুন : ইসলাম ধর্মের উৎপত্তি কোন সময় হয় ?
শবে মেরাজ পালন করা কি জায়েজ ?
শবে মেরাজ পালন করা জায়েজ নেই। বরং শবে মেরাজ কে ফজিলত মনে করে কোনো ধরণের রোজা ও নামাজ আদায় করা বিদআত।
শবে মেরাজের নামাজ কয় রাকাত ?
শবে মেরাজ উপলক্ষ করে যেহেতু কোন নামাজ নেই । অতএব নামাজ কত রাকাত এব্যাপারে কোন প্রশ্ন আসে না। অতএব আমাদেরকে সঠিক বিষয় জেনে আমল করতে হবে।
শবে মেরাজ ২০২৩ কত তারিখে ?
ইংরেজী তারিখ অনুযায়ী ২০২৩ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারী রোজ শনিবার দিবাগত রাত্রে শবে মেরাজ অনুষ্ঠিত হবে ।
আরবী কোন মাসের কত তারিখে মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল ?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুওয়াতের ১১তম বৎসর রজব মাসের ২৭ তারিখে এই শবে মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল । তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স ৫১ বৎসর ছিল ।