আপনি কি শবে কদরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান ? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য শবে কদরে মুসলমানরা সারা রাত নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি করে থাকেন।
শবে কদর আসলে নানান বিষয়ে আমাদের মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে । ফলে আমরা অনেক টেনশনে পড়ে যাই ।
এবং আমলের ক্ষেত্রে অনেক বাড়াবাড়ি করা হয়। ফলে সাধারণ মানুষ অনেক বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে।
আজ আমি শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও শবে কদরের ফজিলত কি এবং দোয়া কি এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিব। পাশাপাশি শবে কদর সম্পর্কে নানান বিষয় আলোচনা করব ।
যাতে করে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন ও সকলের কাছেই স্পষ্ট হয়ে যায় এবং কোন ধরনের সংশয় না থাকে । চলুন আলোচনা শুরু করা যাক ।
শবে কদরের নামাজের নিয়ম
এখানে আমরা আলোচনা করব শবে কদরে নামাজ আছে কিনা নেই ? যদি থাকে তাহলে কত রাকাত ? এবং শবে কদরের ফজিলত কি ? ইত্যাদি ।
নামাজের নিয়ম বলার আগে শবে কদর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব । যাতে করে শবে কদরের ব্যপারে পরিপূর্ণ আইডিয়া হয়ে যায় ।
শবে কদর কি ?
ফার্সিতে বলা হয় শবে কদর অর্থ : বরকতময় রাত্রি। আর আরবিতে বলা হয় লাইলাতুল কদর ।
এ রাত্রিকে আল্লাহতালা রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাত্রে লুকিয়ে রেখেছেন। এ রাত্র হাজার রাতের চেয়েও উত্তম।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা সূরা কদরের মধ্যে বলেন : আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কি ? হাজার মাসের চেয়েও উত্তম হলো লাইলাতুল কদর ।
শবে কদরের নামাজ কবে ?
দুই রাকাত দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বেন। শবে কদরের নির্দিষ্ট রাত যেহেতু জানা নাই তাই শেষ দশদিনের প্রত্যেক বেজোড় রাত্রে।
অর্থাৎ ২১ / ২৩ / ২৫ / ২৭ / ২৯ রমজানের তারাবির নামাজের পরে দুই দুই রাকাত করে যতটুক সম্ভব হয় ততটুকু পড়বেন। পারলে শেষ রাত পর্যন্ত নামাজ পড়তে থাকবেন।
শবে কদরের নামাজের নিয়ম কি ?
নির্দিষ্ট কোন নামাজের নিয়ম বা পদ্ধতি নেই। এবং নির্দিষ্ট কোনো সূরা নেই। অনেকে বলে প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার পড়ে সূরা ইখলাস এতবার পড়তে হয়।
এবং দ্বিতীয় রাকাতে অমুক সূরা এতবার পড়তে হয়। এ ব্যাপারে বলব এ সমস্ত নিয়ম পুরাই ভিত্তিহীন এবং মন গড়া বানানো।
তাই আপনি দুই দুই রাকাত করে আপনার সাধ্য অনুযায়ী শবে কদরের নফল নামাজ আদায় করবেন। পারলে সারারাত পড়তে পারবেন।
আপনি চাইলে যে কোন সূরা দিয়ে নামায আদায় করতে পারবেন। পাশাপাশি একটি বিষয় লক্ষণীয় : নামাজ আদায় করবেন মনোযোগ সহকারে।
নামাজের প্রত্যেকটা রুকন আস্তে আস্তে আদায় করবেন। নামাজের মধ্যে তাড়াহুড়া করবেন না।
Read more : তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও সময়: সঠিক উপায়ে বিস্তারিতভাবে জানুন !
শবে কদরের নামাজ কত রাকাত ?
সাধারণ মানুষ যেহেতু জানে না তাই অনেকেই বিভ্রান্ত করে এ ব্যাপারে। শবে কদরের জন্য নামাজের নির্দিষ্ট সংখ্যক বা বিশেষ সংখ্যা নেই।
অর্থাৎ ৮ রাকাত-ই পড়তে হবে অথবা ১২ রাকাত-ই পড়তে হবে অথবা ২০ রাকাত-ই পড়তে হবে। যারা বলে যে ১২ রাকাত পড়তে হবে অথবা ৮ রাকাত পড়তে হবে অথবা ২০ রাকাত পড়তে হবে । তাদের কথা ঠিক নয়।
মোটকথা : শবে কদরের নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বা নিয়মে কোন নামাজ নেই এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক অর্থাৎ বিশেষ সংখ্যা নেই।
শবে কদরের নামাজের নিয়ত কি ?
কদরের নামাজের বিশেষ কোনো নিয়ত নেই অথবা নির্দিষ্ট কোনো নিয়ত নেই। বরং আপনি স্বাভাবিকভাবে নফল নামাজের নিয়ত এ নামাজ আদায় করবেন। আশকরি আপনি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন ।
শবে কদরের দোয়া কি ?
আম্মাজান হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহাকে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দোয়া শিখিয়েছিলেন এবং
বলেছিলেন আয়েশা কদরের রাত যদি তুমি পাও তাহলে তুমি এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়বে । দোয়াটি হলো : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি । (তিরমিজি)
শবে কদরে করণীয়
এ রাতে যত ইবাদত করতে পারবেন তত লাভ। এ রাত্রে আপনি কয়েক ধরনের আমল করতে পারেন।
- দুই দুই রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।
- বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করতে পারেন।
- নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতের মাঝে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারেন।
- বেশি বেশি জিকির করতে পারেন।
অতএব আমাদের উচিত শবে কদরে বেশি বেশি ইবাদত করে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করা।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক বিষয় বুঝে ঠিক মতো শবে কদরের জন্য আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
এ ব্যপারে আরো বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন ।
পরিশেষে বলব : উপরে উল্লেখিত শবে কদরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে যা আলোচনা করা হলো যদি এ গুলো ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং শেয়ার করতে ভুলবেন না।
অতএব শবে কদরে যে সমস্ত বিষয় করণীয় তা আমরা পালন করব আর যে সমস্ত বিষয় বর্জনীয় তা থেকে আমরা বেঁচে থাকবো। ইনশাআল্লাহ। ধন্যবাদ।
FAQ
শবে কদরের নামাজ নফল না সুন্নত ?
লাইলাতুল কদরের নামাজ হলো নফল। অতএব আপনি খুব সুন্দর ভাবে যত বেশি পারেন এই নামাজ পড়বেন।
শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে না পরে ?
আপনি ইচ্ছা করলে কদরের নামায বিতরের নামাযের আগে পড়তে পারেন আবার ইচ্ছা করলে কদরের নামায বিতরের নামাযের পড়ে পড়তে পাড়েন । এটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার ।
শবে কদরের ফজিলত কি ?
শবে কদরের ফজিলত অনেক । কোরআনে বর্ণিত আছে। শবে কদরের রাত হল হাজার মাসের থেকে উত্তম।
কোরআনের আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা : বলেন এ রাতে ইবাদত অন্য হাজার মাসের ইবাদত থেকে উত্তম।
এরকম অনেক ফজিলত রয়েছে।