আপনি কি মাশরুম চাষের ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চান ? তাহলে এ আর্টিকেলটা আপনার জন্য।
বর্তমান সময়ে চাকরি করার থেকে ব্যবসার প্রতি বহু মানুষ আগ্রহী হচ্ছে। সকলেই অল্প পুঁজি ইনভেস্ট করে প্রচুর পরিমাণ লাভ করতে চায়।
একটি ব্যবসা করতে সঠিক গবেষণা এবং বিচারের প্রয়োজন। অর্থাৎ ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে ভালোভাবে ব্যবসা সম্পর্কে আইডিয়া নিতে হবে।
দেখতে হবে কোন ব্যবসার মধ্যে অল্প পুঁজি লাগবে এবং লাভ অনেক দ্বিগুণ হবে। এরকম ব্যবসা গ্রহণ করতে হবে ।
আজকে আমি এমন একটি Business Idea সম্পর্কে তথ্য দেব যে ব্যবসাটি অল্প পুঁজির মধ্যে অনেক লাভজনক একটি ব্যবসা।
এই ব্যবসাটি সঠিক উপায়ে করতে পারলে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা আয় করতে পারবেন।
আর এই ব্যবসাটি হল মাশরুম চাষের ব্যবসা। এই ব্যবসাটি খুবই লাভজনক। কেননা এক কেজি মাশরুম তৈরিতে খরচ হয় মোটামুটি ত্রিশ টাকা।
আর এগুলো বিক্রি হয় মোটামুটি ৩০০ টাকা দরে। তাহলে বুঝতেই পারছেন মাশরুম ব্যবসা অনেক লাভজনক।
অতএব আপনাদের সুবিধার্থে এই ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। পাশাপাশি নানান খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তুলে ধরব।
যাতে করে আপনি খুব সহজেই কোন ধরনের প্রবলেম এর সম্মুখীন হওয়া ছাড়াই এই চমৎকার ব্যবসাটি করতে পারেন।
মাশরুম চাষের ব্যবসা ২০২৩
মাশরুম খুবই সুস্বাদু একটি খাবার। এর মধ্যে অনেক পুষ্টি হয়েছে , দ্রুত হজম হয়। পাশাপাশি মাশরুম এর মধ্যে রয়েছে অনেক ভিটামিন , প্রোটিন এবং খনিজ উপাদান সমূহ।
এই কারণে মাশরুমের অনেক চাহিদা রয়েছে। তাই আপনি মাশরুমের ব্যবসা করতে পারেন। অনেক লাভবান হতে পারবেন।
মাশরুম চাষ পদ্ধতি কি ?
মাশরুমের নানা জাত রয়েছে। সারা বিশ্বে চাষ করা হয় নানান রকমের মাশরুম। তবে আমাদের দেশে তিন ধরনের মাশরুম বেশি পাওয়া যায়।
- মিল্কি
- প্যাডি স্ট্র
- ওয়েস্টার
ওয়েস্টার মাশরুম শীতকালে সবচেয়ে ভালো হয়। আর অন্যান্য দুইটা ঠান্ডা কমার পর থেকে চাষ করা যেতে পারে।
ওয়েস্টার মাশরুম চাষ পদ্ধতি
ওয়েস্টার মাশরুম সবচেয়ে লাভজনক। এই মাশরুমটি চাষ করার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম তিনটি উপকরণ সংগ্রহ করতে হবে।
- পলিথিনের ব্যাগ
- খড়
- বীজ । ( ট্রেনিং সেন্টার , কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ইত্যাদি এরকম ভালো মানের প্রতিষ্ঠানে বীজ পেয়ে যাবে ) ।
তৈরি করার পদ্ধতি
- সর্বপ্রথম আপনাকে আধা ইঞ্চি অথবা এক ইঞ্চি মাপের খড় কাটতে হবে।
- নানান রকম জীবাণু দূর করার জন্য একেবারে ফুটন্ত গরম পানিতে প্রায় ২০ মিনিট ফুটাতে হবে। তবে ইচ্ছা করলে চুনা মেশানো পানি বা ব্লিচিং পাউডারের ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে পারেন। এতে করেও জীবাণু দূর হয়ে যাবে।
- জীবাণু মুক্ত করার পর খড় থেকে পানি ভালোভাবে জড়াতে হবে। যাতে করে খড়ের মধ্যে চাপ দিলে কোন ধরনের পানি না পড়ে। তবে একেবারে শুকানো যাবে না। বরং খড়ে হাত দিলে ভিজা অনুভব হয়।
- এরপর পলিথিন নিবেন। পলিথিনের মধ্যে 2 ইঞ্চি পুরু করে খড় বিছিয়ে নিবেন। খড় ভালোভাবে হাত দিয়ে চেপে দিবেন। যাতে করে কোন ধরনের হাওয়া জমতে না পারে। তার উপর বীজ ছড়িয়ে দিবেন।
- ঐ বীজের উপর আবার ২ ইঞ্চি পুরু ঘর দিবেন এরপর আবার বীজ ছড়িয়ে দিবেন।
- এইভাবে সাত থেকে আটটা স্তর তৈরি করবেন। তারপর পলিথিনের ব্যাগটি ভালোভাবে বন্ধ করে দিবেন।
- এরপর সম্পূর্ণ পলিথিন ব্যাগে ১২ থেকে ১৩ টি ছিদ্র করে দিবেন। ওই ছিদ্রগুলো তুলা দিয়ে বন্ধ করে দিবেন। এতে করে ওই তুলা দিয়ে হাওয়া প্রবেশ করতে পারবে। তবে কোন ধরনের ধুলাবালি প্রবেশ করতে পারবে না।
- এরপর এই পলিথিনের ব্যাগটি ১০ থেকে ১২ দিনের জন্য একটি নিরাপদ স্থানে রেখে দিন। যাতে করে পোকামাকড় , মাছি আক্রান্ত না করতে পারে। এদিকে খেয়াল রাখবেন। পাশাপাশি আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন ওই জায়গায় যেন হাওয়া প্রবাহিত হয়।
- কিছু দিন অতিবাহিত হলেই এই পলিথিন বেগে সাদা সাদা আস্তরণ দেখতে পারবেন। আর এটাকে বলা হয় মাইসেলিয়াম।
- যখন সম্পূর্ণ পলিথিনটি মাইসেলিয়ামে ভরে যাবে তখন সমস্ত তোলা ফেলে দিতে হবে। তারপর আরো কয়েকটি ছিদ্র করতে হবে।
- তারপর হালকা আলোর মধ্যে এই পলিথিন ব্যাগটি রাখতে হবে। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সরাসরি রোদ যেন এই পলিথিন ব্যাগে না পড়ে। পাশাপাশি বাতাস যেন চলাচল করতে পারে।
- প্রয়োজন অনুপাতে মাঝে মাঝে পানি স্প্রে করতে হবে। এরপর কয়েক দিন পরে মাশরুমের পিনহেড দেখতে পারবেন। মোটামুটি ২৫ থেকে ৩০ দিনের মতো মাশরুম তৈরি হতে সময় লাগে। এই পলিথিনের ব্যাগ থেকে মোটামুটি তিনবার মাশরুম তৈরি করতে পারবেন।
আরো পড়ুন :
মিল্কি মাশরুম চাষ পদ্ধতি কি ?
এই মাশরুমটি গরমকালে বেশি হয়। এই মাশরুমটি ওয়েস্টার মাশরুমের মতোই চাষ করতে হয়। তবে কয়েকটি বিষয়ে আলাদা লক্ষ্য রাখতে হবে।
- খড়গুলো অবশ্যই সোনালী রঙের হতে হবে।
- প্রতি বীজের মাঝখানে কমপক্ষে 10 থেকে 14 কেজি খড় দিতে হবে।
- গরম পানিতে এক ঘণ্টার বেশি চুবিয়ে রাখা যাবে না।
- গরম পানির তাপমাত্রা ৫৫ থেকে ৬০ ডিগ্রী হতে হবে।
এই সমস্ত পদ্ধতি গুলো আলাদা ওয়েস্টার মাশরুমের থেকে। বাকি সমস্ত পদ্ধতি ওয়েস্টার মাশরুমের মতোই। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন।
মাশরুম চাষের ট্রেনিং কোথায় হয় ?
নানান জায়গায় মাশরুমের ট্রেনিং দেওয়া হয়। তবে সব থেকে উল্লেখযোগ্য স্থান হলো : সাভার ।
সাভারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর একটি প্রকল্প চালু করেছে। সেখানে তিনদিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর জন্য আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এরপর আপনাকে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।
মাশরুম চাষে লাভ কেমন ?
এ ব্যবসায় লাভ অনেক বেশি। কেননা মাশরুম মানুষের অনেক চাহিদাপূর্ণ একটি খাবারের পরিণত হয়ে গিয়েছে।
৩০০০০ টাকা খরচ করে প্রতিমাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
অতএব আপনি যদি ইনভেস্ট আরও বেশি করেন তাহলে লাভ আরো বেশি হবে। এগুলা আপনি বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবেন।
উপসংহার
উপরে মাশরুম চাষের ব্যবসা সম্পর্কে আলোচনা করলাম । মাশরুম ব্যবসা খুব লাভজনক একটা ব্যবসা।
সুতরাং আপনি যদি উপরোক্ত কথাগুলো মাথায় রেখে মাশরুম ব্যবসা শুরু করেন। তাহলে আপনি লাভবান হতে পারবেন।
আশাকরি আপনি অনেক উপকার পেয়েছেন । লেখা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।