আপনি কি নতুন মিটারের জন্য অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান ? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন আর এই আর্টিকেলটা শুধু আপনার জন্য।
বিদ্যুৎ খুবই প্রয়োজনীয় বিষয়। বর্তমান সময়ে বিদ্যুৎ ছাড়া বিকল্প কোন কিছুর চিন্তাই করা যায় না। বিদ্যুৎ প্রত্যেকটি মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত রয়েছে।
অনেকেই বিদ্যুতের জন্য নতুন মিটার নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন আবার অনেকে নানান চেষ্টা করছেন কিন্তু নতুন মিটার পারছেন না। ফলে নানান টেনসনে ভুগছেন। বর্তমান সময়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। কেননা সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী অনলাইনে নতুন মিটারের জন্য আবেদন করা যাচ্ছে।
যদি আপনি নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করেন তাহলে 30 দিনের মধ্যে নতুন মিটার পেয়ে যাবেন এবং নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে যাবেন।
পাশাপাশি অনলাইনে আবেদন করার সুবিধা থাকার কারণে নানান ধরনের ঝামেলা থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন।
তাই আজ আমি নতুন মিটারের জন্য অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব।
পাশাপাশি নানান ধরনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যাতে করে আবেদন করার ক্ষেত্রে কোন ধরনের ঝামেলায় না পড়েন এবং খুব সহজেই আপনার কাঙ্খিত নতুন মিটার পেয়ে যান। তাই অবশ্যই এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
নতুন মিটারের জন্য অনলাইনে আবেদন ২০২৪
আবেদনের নিয়ম জানার আগে আমাদেরকে আরো কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে তাহলে আবেদন করার ক্ষেত্রে সহজ হবে।
যেমন : আবেদন করার জন্য কি কি বিষয় লাগবে ও আবেদনের জন্য কি কি শর্ত রয়েছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিতভাবে নিচে আলোচনা করব।
নতুন মিটারের জন্য আবেদন পত্র দেওয়ার আগে কি কি কাজ করতে হবে ?
মিটারের জন্য আবেদন করার আগে অনেক জিনিস প্রস্তুত করতে হবে পাশাপাশি অনেকগুলো কাজ করতে হবে। যা যা করতে হবে নিচে দেওয়া হল :
- যিনি আবেদন করছেন তার পরিচয় পত্র লাগবে।
- সম্পূর্ণ নাম লাগবে
- ব্যবহারিত মোবাইল নাম্বার লাগবে।
- স্থায়ী ঠিকানা লাগবে।
- সংযোগস্থলের সম্পূর্ণ ঠিকানা লাগবে । অর্থাৎ যে স্থানের জন্য আবেদন করছেন ওই স্থান সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তথ্য দিতে হবে।
- সংযোগস্থলের জমির খারিজের স্ক্যানিং কপি লাগবে। পাশাপাশি ওই জমির ব্যাপারে আপনার মালিকানার তথ্য , খতিয়ান নাম্বার ও দাগ নাম্বার দিতে হবে। মোটকথা সংযোগস্থলের জমির ব্যাপারে সম্পূর্ণ তথ্য লাগবে।
- আপনার ছবি লাগবে।
- সংযোগস্থল থেকে সার্ভিস ড্রপ তথা বিদ্যুৎ খুঁটির দূরত্ব কতটুকু তা জানার জন্য ভালোভাবে মাপুন। কেননা এর তথ্য লাগবে। সঠিকভাবে না মেপে ভুল তথ্য দিলে নতুন সংযোগ পেতে অনেক বিলম্ব হতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে নতুন সংযোগ নাও পেতে পারেন। তাই অবশ্যই এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
- যে বাড়ির জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে ওই বাড়িতে কি কি রয়েছে সে সম্পর্কে তথ্য লাগবে। যেমন : কয়টি ফ্যান রয়েছে , কয়টি লাইট রয়েছে , কয়টি ফ্রিজ রয়েছে ইত্যাদি এ সমস্ত জিনিসের তথ্য লাগবে।
- আপনার গ্রাউন্ড রডের ক্যাশ মেমোর ফটোকপি লাগবে আপনার বাড়ির হাউজ ওয়ারিং নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে।
- আপনি যে ট্রান্সফারমার হতে বিদ্যুতের সংযোগ নিতে চাচ্ছেন। ঐ ট্রান্সফারমারের আওতাধীন আপনার পাশের যে কোন একজন ব্যক্তির হিসাব নাম্বার এবং বই নাম্বার লাগবে।
এই সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং তথ্য সামগ্রী প্রস্তুত রেখে পল্লী বিদ্যুৎ মিটার অনলাইন আবেদন করুন । তাহলে কোন ঝামেলা ছাড়াই নতুন মিটার পেয়ে যাবেন ।
বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন পত্র দেওয়ার আগে কি কি শর্ত রয়েছে ?
নতুন মিডিয়ার আবেদন করার জন্য অনেকগুলো শর্ত রয়েছে। অবশ্যই আপনাকে এ সমস্ত শর্তগুলো মেনে তারপর আবেদন করতে হবে। শর্তগুলো হলো এই :
- সংযোগস্থল থেকে সার্ভিস ড্রপের দূরত্ব অর্থাৎ বিদ্যুৎ খুটির দূরত্ব ১৩০ ফুটের মধ্যে থাকতে হবে। অন্যথায় নতুন মিটার দেয়া হবে না।
- আপনার ব্যবহৃত বিদ্যুতের লোড যদি ৮০ কিলোওয়াট এরকম হয় তাহলে কোন ঝামেলা নেই। তবে যদি বিদ্যুতের লোড ৮০ কিলোওয়াট এর বেশি হয় তাহলে অবশ্যই আপনার উপর HT সংযোগের নিয়মাবলী প্রয়োগ হবে।
- আপনার ছবি লাগবে । এর সাইজ হলো (৩০০ *৩০০) পিক্সেল হতে হবে। আর ১৫০ KB এর উপরে যেন না হয়।
- এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি অবশ্যই লাগবে আবেদন করার সময়। এর সাইজ হলো (৬০০ *৪৭৫) পিক্সেল হতে হবে। আর ৩০০ KB এর উপরে যেন না হয়।
- যে স্থানের জন্য বিদ্যুতের সংযোগ দিচ্ছেন ওই স্থানের খারিজের স্ক্যানিং কপি অবশ্যই লাগবে। আর এটা ৭০০ KB এর উপরে যেন না হয়।
- যে স্থানের জন্য বিদ্যুতের সংযোগ নিতে চাচ্ছেন ঐ স্থান থেকে বিদ্যুৎ খুঁটির দূরত্বের পরিমাণ অবশ্যই লাগবে। এজন্য অবশ্যই আপনাকে সঠিকভাবে মেপে দ্রুত নির্ণয় করতে হবে।
- অবশ্যই আপনার ব্যবহারিত মোবাইল নাম্বার লাগবে। যেখানে এসএমএস এর মাধ্যমে নানান ধরনের নির্দেশনা জানানো হবে।
- আবেদনের জন্য অবশ্যই আপনাকে মেম্বারশিপ ফি , আবেদন ফি এবং নিরাপত্তা ফি জমা দিতে হবে।
আবেদন করার জন্য অবশ্যই এ সমস্ত শর্ত মেনে তারপর আবেদন করতে হবে।
বিস্তারিতভাবে নতুন মিটারের জন্য অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম
আবেদন করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে পল্লী বিদ্যুতের ওয়েবসাইট rebpbs.com যেতে হবে। তারপর নিচের পিকচারের মত একটি পেজ আসবে।
এই পেজটি পরিপূর্ণভাবে আপনাকে পূর্ণ করতে হবে। বিশেষ করে লাল রঙ্গের (*) চিহ্নের ক্ষেত্রে অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
১. এখানে আপনাকে বিদ্যুৎ অফিসের বিবরণ বিস্তারিতভাবে দিতে হবে।
২. সংযোগের ট্যারিফ দিতে হবে। অর্থাৎ একক বাসা / বাড়ির ক্ষেত্রে এলটি -এ (আবাসিক ) অপশনটি নির্বাচন করুন। আর বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ির জন্য এমটি -এ (আবাসিক) নির্বাচন করুন।
৩. যিনি আবেদন করছেন তার সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিবরণ দিতে হবে। অর্থাৎ আবেদনকারীর নাম , তার পিতা-মাতার নাম ইত্যাদি।
১. তারপর আবেদনকারীর স্থায়ী ঠিকানা লিখতে হবে। স্থায়ী ঠিকানা লেখার সময় প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ সংযোগস্থলের ঠিকানা দিবেন। তারপর খালি বক্সে টিক দিবেন।
২. প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ সংযোগস্থলের বিবরণ বিস্তারিতভাবে দিতে হবে। অর্থাৎ আপনার জেলা কোথায় , ইউনিয়ন কি , পাশাপাশি জমির মালিকানার ধরন কি, মৌজা কি , খতিয়ান নাম্বার কি ইত্যাদি এ সমস্ত বিষয় পূরণ করতে হবে।
৩. জিওগ্রাফিক তথ্য বিস্তারিতভাবে দিতে হবে। অর্থাৎ আপনার সংযোগস্থল থেকে সার্ভিস পোল এর দূরত্ব কতটুকু তা উল্লেখ করতে হবে। যদি দূরত্ব বেশি হয় তাহলে নতুন একটি খুঁটি দিতে হবে। এ ব্যাপারে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া যাবে না। পাশাপাশি আপনার ট্রান্সফরমারের আওতাধীন পার্শ্ববর্তী গ্রাহকের বই নাম্বার , মিটার নাম্বার, পোল নাম্বার হিসাব নাম্বার ইত্যাদি এসব বিষয়ে পূরণ করতে হবে।
১. আপনার কানেকশনের ধরন স্থায়ী নাকি অস্থায়ী সেটা নির্বাচন করতে হবে।
২. আপনি আপনার বাসায় যে সমস্ত লাইট , ফ্যান ব্যবহার করেন তা মোট কয়টি ও কি কি তা লিখতে হবে। পাশাপাশি ওয়াট কত তা লিখতে হবে। এরপর লোড কত তা অটোমেটিক ভাবে সংযুক্ত হয়ে যাবে।
৩. এরপর চাহিদাকৃত লোড দেখাবে।
৪. বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের লোকেশন লিখতে হবে।
১. আপনার ছবি জাতীয় পত্র এবং খারিজ আপলোড করতে হবে। স্কেনিং করে আপলোড করতে পারেন অথবা ছবি তুলে আপলোড করতে পারেন। তবে অবশ্যই উপরে দেওয়া সাইজ মেনটেন করতে হবে।
২. এখানে কয়েকটি শর্ত রয়েছে । এই শর্তগুলোর উপরে আবেদনকারীর একমত পোষণ করতে হবে। এজন্য খালি বক্সে টিক দিতে হবে।
৩. এখানে কয়েকটি সংখ্যা লেখা থাকবে। এ সংখ্যাগুলো নিচের বক্সে লিখতে হবে।
৪. সংখ্যাগুলো লেখার পর সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করুন। তারপর আপনাকে ট্যাকিং নাম্বার এবং পিন নাম্বার দেওয়া হবে। অবশ্যই এগুলোকে সংরক্ষণ করুন। এগুলো ভবিষ্যতে আপনার কাজে লাগবে।
এতক্ষণ পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে যা আলোচনা করলাম । আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। এরপর আরো কয়েকটি কাজ করতে হবে ।
হাউস ওয়্যারিং নিশ্চিত করতে হবে
১. হাউস ওয়্যারিং নিশ্চিত করার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম আবেদন নামক অপশন থেকে হাউস ওয়্যারিং নিশ্চিত করুন নামক অপশনে যেতে হবে।
২. এখানে আপনার ট্রাকিং নাম্বার এবং পিন নাম্বার দিতে হবে। তারপর সাবমিট নামক বাটনে ক্লিক করতে হবে। তারপর আপনার গ্রাউন্ড রডের ক্যাশ মেমো আপলোড করতে হবে। তারপরে আপনার বাড়ির ঠিকানা দিতে হবে। এরপর আপনাকে ক্যাপচা পূরণ করে সমর্পণ করুন নামক বাটনে ক্লিক করতে হবে।
এভাবে আপনার হাউস ওয়্যারিং নিশ্চিত হয়ে যাবে।
নতুন মিটারের জন্য অনলাইনে আবেদন করে সংযোগ ফি পরিশোধ করতে হবে
আবেদন করার পর আপনাকে আবেদন ফি দিতে হবে। আবেদন ফি দেওয়ার দুইটি পদ্ধতি রয়েছে।
- রকেট এর মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন।
- সরাসরি বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে পরিশোধ করতে পারবেন।
রকেটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগের ফি দেওয়ার নিয়ম
নিচে একটি পিকচার দেওয়া হল নিয়ম সম্পর্কে
এই পিকচারের মধ্যে রকেটের মাধ্যমে ফি দেওয়ার সম্পূর্ণ প্রসেস দেখানো হয়েছে। আশা করি এ পিকচার ফলো করলে খুব সহজেই আবেদন ফি দিতে পারবেন রকেটের মাধ্যমে।
পরিশেষে বলবো : উপরে নতুন মিটারের জন্য অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা হয়েছে। আশা করি আপনি খুব সহজে বুঝতে পেরেছেন। যদি উপকার পেয়ে থাকেন অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।