ডেঙ্গু জ্বরের কারণ সম্পর্কে জানতে অনেকেরই প্রশ্ন থাকে। তাদের জন্য শুধু এই তথ্য-বহুল আর্টিকেলটি ।
সম্প্রতি বাংলাদেশে ডেঙ্গু মশার উৎপাতে পূর্বের রেকর্ড ছাড়িয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হাজার পার করেছে।
তাই সাস্থ সচেতনতায় অনলাইনে অনেকেই নানান প্ৰশ্ন করে থাকে। ডেঙ্গু জ্বরের কারণ ও লক্ষণ কি কি এবং কত দিন থাকে ? ইত্যাদি এই ডেঙ্গু জ্বর বিষয়ের সকল প্রশ্নোত্তর নিয়ে আজকের আলোচনা।
ডেঙ্গু জ্বরের কারণ কি ?
জ্বরের কারণ জানার আগে প্রথমেই জানা দরকার আসলে জ্বর কি ?
জ্বর আসলে কোনো ব্যাধি না। অন্যান্য ভাইরাসের সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করে থাকে। কারণ জ্বরের নিজস্ব কোনো সত্তা নেই। মূলত জ্বর হলো রোগের পূর্বাভাস।
এডিস এজিপ্টি কি ?
এডিস এজিপ্টি হলো ডেঙ্গু মশার নাম। ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস বহনকারী মশার নাম ই হলো এডিস মশা।
বাসার আসে পশে পচা পানি বা কোনো পাত্রের পানি অব্যাবহৃত অবস্থায় জমে থাকার কারণে এডিস মশার জীবাণুর জন্ম নেয়।
একজন সাস্থ সচেতন নাগরিক হিসেবে বাড়িরই আনাচে কানাচে অপরিষ্কার রাখা বাঞ্চনীয়। এতে করে নিজের এবং নিজের পরিবারের বা পার্শবর্তী কোনো পরিবারের মানুষের সাস্থ ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
তাই সর্বদা ডেঙ্গু জ্বর থেকে নিজেকে বা পরিবারকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
যেমন ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করে ডেঙ্গু থেকে বাঁচার সুন্দর সমাধান হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর কি ?
ডেঙ্গু জ্বর মূলত ডেঙ্গু বাহিত বা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। সাধারণত ডেঙ্গু মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে।
ডেঙ্গু মশার কামড়ে ভাইরাস সংক্রমণের ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে জ্বর, মাথা ব্যথা বা বমি হওয়া এরকম উপসর্গ দেখা দিলে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর কেন হয় ?
ডেঙ্গু মশা কামড়ালে যে জ্বর হয় সেটাকেই ডেঙ্গু জ্বর বলে বিষয়টা এমন নয়।
তবে ডেঙ্গু মশা কামড়ালে জ্বর হতে পারে যদি ওই ডেঙ্গু মশা ভাইরাস বহন করে থাকে।
আবার কোনো ডেঙ্গু মশা যদি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কোনো অসুস্থ মানুষকে কামড়ায় এবং পরবর্তীতে কোনো সুস্থ মানুষের শরীরে বসে সেক্ষেত্রে সুস্থ মানুষটির শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস বিস্তার করবে।
ডেঙ্গু মশা সাধারণত অন্যন্য সাধারণ মশার মতো একই চরিত্রের হয়ে থাকে। একধিক মানুষের শরীরে বসে এবং ভাইরা বহন করে বিস্তার করে থাকে। তাই এই মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার প্রবণতাটা বেশি থাকে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার কি কি ?
অনেক লক্ষণ রয়েছে । নিচে কয়েকটি লক্ষণ তুলে ধরা হলো :
- জ্বর
- মাথা ব্যথা, বিশেষ করে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা, পেশিতে ব্যথা, মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা।
- শরীরে লালচে র রেশ হওয়া।
- ডেঙ্গু জ্বর হলে পাতলা পায়খানা সহ পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা ইত্যাদি।
- কাশি বা বমি ভাব হওয়া অথবা বমি হওয়া।
- ক্ষুধামন্দা।
- শরীরে অস্বাভাবিক দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভূতি।
- রক্তক্ষরণ হওয়া যেমন ধরন, মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, পায়খানায় কালো রং, মেয়েদের মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত।
- শরীরে রক্তচাপ কমে দিয়ে পালস রেট বেড়ে যাওয়া।
তাই সবচাইতে বুদ্ধিমানের কাজ হলো শরীরে জ্বরের অনুভূতি হলে ডেঙ্গু জ্বরের জন্য অপেক্ষা না করে দূরত্ব ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।
ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ ?
ডেঙ্গু জ্বর আসলে কোনো ছোয়াচে রোগ নয়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে বা তার সাথে বিসানায় ঘুমালে বা একসাথে খাবার খেলে অথবা অসুস্থ ব্যক্তির সেবা সশ্রুসা করলে তাতে ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে ?
ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয় করণীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্লিডিং, ডিহাইড্রেশন এবং অন্যন্য সকল জটিলতা রোধে সুষম খাবারের মাদ্ধমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর প্লাটিলেট বাড়াতে প্রয়োজনীয় সঠিক খাবার খেতে হবে।
প্রথম ধাপে রোগীর জন্য তরল জাতীয় খাবার খাওয়াটাই ভালো। কারণ এতে করে রোগীর শরীরের পানিশুন্যতা দূর হওয়ার পাশাপাশি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী যখন উত্তরণের দ্বিতীয় ধাপে থাকে তখন সহজে হজম যোগ্য কিছু খাবার রোগীকে খাওয়ানো প্রয়োজন।
ভাত, পোরিজ, খিচুড়ি, দই, সেদ্ধ আলু, সেদ্ধ শাকসবজি যেমন কুমড়ো, সবুজ মটর, পেঁপে আরো অন্যন্য খাবার।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে ?
ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে গোছল করানো যাবে। অন্যান্য জ্বরের মতোই গোছল করানো যেতে পারে।
তবে রোগীর শরীরে যদি ঠান্ডা লাগার উপক্রম থাকে সেক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোছল বা হাত, পা এবং শরীর মুছে দিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করণীয়:
- অপরিছন্ন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় না থাকার চেষ্টা করুন
- ঘুমানোর পূর্বে মশারি বা মশা তাড়ানোর স্প্রে ব্যবহার করুন
- সন্ধ্যার পরে বাহিরে বের না হওয়া। কারণ সন্ধ্যার পরে মশার উৎপাত বেড়ে যায়।
- বাহিরে যাওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হলে তাহলে ফুলহাতা জামা ব্যবহার করুন এবং মোজা পরুন।
- ঘরের দরজা এবং জানালা বন্ধ রাখুন
- নিজের শরীরে বা পরিবারের করো ডেঙ্গুর লক্ষণ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- মনে রাখবেন দিনের বেলাও ডেঙ্গু মশা কামড়ায়।
ডেঙ্গু জ্বরে পূর্ব সতর্কতা:
ডেঙ্গু জ্বরে পূর্ব সতর্কতা অবলম্বনে বেশ কিছু বিষয়ের দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। যেমন ধরুন ঘরের জানালা দরজা বন্ধ রাখা এবং ঘুমানোর পূর্বে মশারি ব্যবহার করা বা মশা নাশক স্প্রে ব্যবহার করা।
শরীরে জ্বরের কোনো লক্ষণ অনুভূতি হলে Thermometer ব্যবহার করে শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করা।
তরমুজ, পাকা কলা, পাকা পেঁপে বা এই জাতীয় ফলগুলোও রোগীকে খাওয়ানো যেতে পারে। যখন রোগী ধীরে ধীরে সুস্থতা অর্জন করবে তখন তাকে পুষ্টিকর খাবার দেয়া যেতে পারে।
কারণ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর পাতলা পায়খানা সহ নানান জটিলতা বা রক্ত ক্ষরণের কারণে শরীরে পানিশুন্যতা হয় হয়ে থাকে আর এই ধরণের ফলমূল শরীরের বিভিন্ন ক্ষয় পূরণ করতে সহযোগিতা করে থাকে।
ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে ?
এডিস মশা কামড়ানোর ৬-৭ দিনের মাথায় জ্বর আসে । আর এই ডেঙ্গু জ্বর ৬ থেকে ৭দিন থাকতে পারে । আবার অনেকের ক্ষেত্রে ১০দিনও থিাকে ।
পরিশেষে বলবো :
উপরে ডেঙ্গু জ্বরের কারণ কি এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো ।
আশা করি আপনি পরিপূর্ণভাবে বুঝতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। তাই অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন। পাশাপাশি কমেন্ট করতে ভুলবেন না।