নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন ২০২৩

আপনি কি নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম জানতে চান ? তাহলে এই আর্টিকেলটি শুধু আপনার জন্য।

জন্ম নিবন্ধন বর্তমান সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। কেননা এই জন্ম নিবন্ধন এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আর এটা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক।

স্কুল কলেজে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে নানা প্রয়োজনে এই জন্ম নিবন্ধন আমাদের কাজে লাগে।

বিশেষ করে ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করার ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন আমাদের আবশ্যক। তাই অবশ্যই আমাদেরকে জন্ম নিবন্ধন এর ব্যাপারে অবহেলা করলে চলবে না।

আমাদেরকে জন্ম নিবন্ধন তৈরি করতে হবে। এজন্য অবশ্যই আমাদেরকে তৈরি করার নিয়ম-কানুন জানতে হবে।

তাই আজ আমি আপনাদের সুবিধার্থে নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

পাশাপাশি নানান সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ম বিষয় তুলে ধরব। যাতে করে আপনি কোন ধরনের প্রবলেম এর শিকার না হন।

অতএব আপনাকে অবশ্যই এই লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। তাহলে আপনি সমস্ত বিষয় ভালোভাবে জানতে পারবেন।

কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায়

নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম 2023

আবেদন করার নিয়ম জানার আগে আমাদেরকে আরো কয়েকটি বিষয় জানতে হবে।

যেমন : 

  • জন্ম নিবন্ধন এর প্রয়োজন কেন ?
  • নিবন্ধন করার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগবে ?

ইত্যাদি এরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করার পর আবেদনের নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব। অতএব আপনি গুরুত্ব সহকারে আর্টিকেলটি পড়বেন। চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।

জন্ম নিবন্ধন এর প্রয়োজন কেন ?

বর্তমান সময়ে জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। কেননা নানান ক্ষেত্রে এই জন্ম নিবন্ধন আমাদের প্রয়োজন পড়ে। যেমন :

  • স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য জন্ম নিবন্ধন আবশ্যক।
  • ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করার জন্য জন্ম নিবন্ধন আবশ্যক।
  • ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করার পূর্বে আপনি যদি পাসপোর্ট তৈরি করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে জন্ম নিবন্ধন এর মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
  • ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করার পূর্বে আপনি যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে চান তাহলে আপনাকে জন্ম নিবন্ধন এর মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
  • বিবাহ করার সময় জন্ম নিবন্ধন আবশ্যক। কেননা এতে করে পাত্র-পাত্রীর বয়স প্রমাণিত হয়।

ইত্যাদি এরকম নানান প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এই জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করা হয়। তাই প্রত্যেক মা-বাবার জন্য কর্তব্য হলো শিশু জন্ম হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন তৈরি করা।

কেননা শিশুর বয়স যদি দুই বছরের বেশি হয় তাহলে জরিমানা দিতে হয়। তাই এ ব্যাপারে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।

জন্ম নিবন্ধনের জন্য কি কি কাগজপত্র লাগবে ?

  • শিশু বাড়িতে জন্মগ্রহণ করলে তথ্য সংগ্রহকারীর প্রত্যয়ন পত্র।
  • হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করলে হাসপাতালের সার্টিফিকেট।
  • হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ লাগবে।
  • পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি অথবা অনলাইন কর্তৃক নিবন্ধিত জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি।

প্রত্যেকটি শিশুর বয়স অনুপাতে জরুরী কাগজপত্র নানান রকম হতে পারে। আমি নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরছি।

যদি আপনার শিশুর ০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করতে চান।

  • হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ লাগবে।
  • হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করলে হাসপাতালের সার্টিফিকেট লাগবে।
  • বাড়িতে জন্মগ্রহণ করলে স্বাস্থ্যকর্মি কর্তৃক প্রত্যয়ন পত্র লাগবে।
  • পিতা মাতার অনলাইন কর্তৃক নিবন্ধিত জন্ম নিবন্ধন লাগবে অথবা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে।
  • অভিভাবকের মোবাইল নাম্বার লাগবে।

যদি আপনার শিশুর বয়স ৪৬ দিন থেকে পাঁচ বছর হয় ।

  • হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ লাগবে।
  • হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করলে হাসপাতালের সার্টিফিকেট লাগবে বা ছাড়পত্র লাগবে।
  • বাড়িতে জন্মগ্রহণ করলে স্বাস্থ্যকর্মি কর্তৃক প্রত্যয়ন পত্র লাগবে বা টিকা কাড লাগবে।
  • পিতা মাতার অনলাইন কর্তৃক নিবন্ধিত জন্ম নিবন্ধন লাগবে অথবা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে।
  • অভিভাবকের মোবাইল নাম্বার লাগবে।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট লাগবে।
  • নিবন্ধন ফি হিসেবে ২৫ টাকা লাগবে।
  • ফরম জমা দেওয়ার সময় এক কপি রঙ্গিন ছবি লাগবে। তবে ছবিটি পাসপোর্ট সাইজের হতে হবে।

আপনার শিশুর বয়স যদি পাঁচ বছরের উপরে হয়।

অর্থাৎ শিশুর বয়স যদি পাঁচ বছর অতিক্রম করে তাহলে এক্ষেত্রে 

  • হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ লাগবে।
  • হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করলে হাসপাতালের সার্টিফিকেট লাগবে।
  • বাড়িতে জন্মগ্রহণ করলে স্বাস্থ্যকর্মি কর্তৃক প্রত্যয়ন পত্র লাগবে  বা টিকা কাড লাগবে।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট লাগবে।
  • পিতা মাতার অনলাইন কর্তৃক নিবন্ধিত জন্ম নিবন্ধন লাগবে অথবা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে।
  • নিবন্ধন ফি  হিসেবে ৫০ টাকা লাগবে।
  • অভিভাবকের মোবাইল নাম্বার লাগবে।

birth certificate registration bd

এখন আমি আলোচনা করব জন্ম নিবন্ধন এর আবেদনের জন্য কি কি প্রসেস ফলো করতে হবে। অবশ্যই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। তাহলে আপনি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায় বিস্তারিতভাবে

আবেদন করার জন্য আপনাকে একটি ওয়েবসাইটে যেতে হবে । ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন : //bdris.gov.bd/br/application।

ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর এরকম একটি পেজ পাবেন।

কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায়
কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায়

প্রথম স্টেপ : এখানে আপনি তিনটি অপশন দেখতে পারবেন। জন্মস্থান, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা। সুতরাং আপনি জন্মস্থান নির্বাচন করবেন।

আর যদি শিশুর জন্ম বাংলাদেশের বাইরে হয় তাহলে বাংলাদেশ দূতাবাস অপশন নির্বাচন করুন। তারপর পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন।

দ্বিতীয় স্টেপ : পরবর্তী অপশনে ক্লিক করার পর নতুন একটি ফ্রম দেখতে পারবেন। আপনাকে এই ফরমটি খুব সতর্কতার সাথে পূরণ করতে হবে।

ফরম পূরণ করার নিয়ম : সর্বপ্রথম নাম দিতে হবে । প্রথমেই নামের প্রথম অংশ এবং পরের ঘরে নামের দ্বিতীয় অংশ। বাংলায় লিখতে হবে এরপর ইংলিশে লিখতে হবে।

ইংরেজি লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ইংরেজি বড় হাতের অক্ষর ব্যবহার করবেন। তারপর শিশুর জন্ম তারিখ উল্লেখ করবেন। এরপর শিশুটি পিতা-মাতার কত নাম্বার সন্তান সেটা উল্লেখ করবেন।

এরপর শিশুটি ছেলে না মেয়ে এটা উল্লেখ করবেন। তারপর জন্মস্থানের পরিপূর্ণ ঠিকানা লিখতে হবে। এই সম্পূর্ণ ফরমটি পূরণ করা হলে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন। আশাকরি কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায় এর উত্তর পাচ্ছেন ।

তৃতীয় স্টেপ : পরবর্তী অপশনে ক্লিক করার পর আরেকটি ফরম পূরণ করতে হবে।

এই ফরমটি পূরণ করার নিয়ম হলো : সর্বপ্রথম শিশুর পিতার জন্ম নিবন্ধন এর নাম্বার লিখতে হবে এরপর পিতার নাম বাংলা ও ইংলিশ এ লিখতে হবে। ইংলিশে লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ইংরেজি বড় অক্ষর ব্যবহার করতে হবে।

তারপর পিতার ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার এবং জাতীয়তা উল্লেখ করবেন। তারপর এই পদ্ধতিতেই শিশুর মায়ের জন্ম নিবন্ধন ও নাম এবং আইডি কার্ডের তথ্য ও জাতীয়তা দিয়ে অপর 4টি ঘর পূরণ করতে হবে। পিতা-মাতার এ সমস্ত তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করা হলে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন।

চতুর্থ স্টেপ : পরবর্তী অপশনে ক্লিক করার পর আরেকটি ফর্ম আসবে। এই ফর্ম আপনি আপনার ঠিকানা দিয়ে পূর্ণ করবেন।

ফরম পূরণ করার নিয়ম : এখানে একটি অপশন আসবে সেটা হলো আপনি কি নিম্নলিখিত কোন ঠিকানায় স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করতে চান ? যদি আপনি কোনটি নয় বাছাই করেন তাহলে ঠিকানা দেওয়ার জন্য নতুন আরেকটি পেজ আসবে।

আপনার জন্মস্থান এর ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই রকম হলে জন্মস্থান এর ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই এই অপশন সিলেক্ট করুন।

এই অপশনে ক্লিক করলে আপনার তথ্যগুলো অটোমেটিকভাবে চলে আসবে। অন্যথায় আপনাকে নতুন ভাবে লিখতে হবে। এই ঠিকানা গুলো পূরণ হয়ে গেলে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন। আশাকরি কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায় এর উত্তর পাচ্ছেন ।

পঞ্চম স্টেপ : পরবর্তী অপশনে ক্লিক করার পর নতুন একটি ফর্ম আসবে। এখানে আবেদনকারীর তথ্য দিন।

নিবন্ধনকারীর সাথে আবেদনকারীর কি সম্পর্ক সেটা উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি আবেদনকারীর ইমেইল ও ফোন নাম্বার দিতে হবে। তারপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।

ষষ্ঠ স্টেপ : পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পর আপনার সমস্ত তথ্য পুনরায় দেখাবে। দ্বিতীয়বার আপনি সমস্ত তথ্য আবার চেক করবেন। যদি কোন ভুল না হয় তাহলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে ফেলুন।

৭ম স্টেপ : সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পর আপনাকে একটি নাম্বার দেওয়া হবে। এ নাম্বারটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

এই নাম্বারের মাধ্যমে আপনি জন্ম নিবন্ধন চেক করতে পারবেন। অবশ্যই আপনি এই নাম্বারটি সংরক্ষণ করুন।

ভালোভাবে সংরক্ষণের জন্য আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে রাখতে পারেন। আশাকরি কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায় এর উত্তর পেয়ে গেছেন ।

জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার 15 দিন পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং আবেদন পত্রের ঐ নাম্বারটি নির্দিষ্ট কার্যালয়ে বা অফিসে জমা দিতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন ফি ২০২৩

বয়সদেশবিদেশ
0 থেকে শিশুর ৪৫ দিন পর্যন্তফ্রীফ্রী
জন্মের ৪৫ দিন থেকে নিয়ে পাঁচ বছর পর্যন্ত25 টাকা1 ডলার
পাঁচ বছরের পর থেকে50 টাকা1 ডলার

পরিশেষে বলব : যদি প্রত্যেকটি স্টেফ ভালো করে ফলো করেন। তাহলে কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই আবেদন করতে পারবেন। অন্যথায় প্রবলেম এ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপরে নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।

আরো পড়ুন : জন্ম নিবন্ধন সংশোধন অনলাইন

জন্ম নিবন্ধন যদি না থাকে অনলাইনে তাহলে কি করতে হবে ?

যদি জন্ম নিবন্ধন বাস্তবেই অনলাইনে না থাকে । তাহলে এ ক্ষেত্রে করণিয় হলো নতুনভাবে আবেদন করতে হবে জন্ম নিবন্ধন এর জন্য ।

একাধিকবার একজন ব্যক্তি কি জন্ম নিবন্ধন করতে পারবে ?

একাধিকবার জন্ম নিবন্ধন করতে পারবে না একজন ব্যক্তি । যদি করে তাহলে তার জন্য শাস্তি রয়েছে।

জন্ম নিবন্ধন করার সময় শিশুর পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন না থাকলে কি করনীয়

2021 সালে নতুন একটি আইন হয়েছে যে , 2001 সালের পর জন্মগ্রহণকারী শিশু বা সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে হলে পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন অবশ্যই থাকতে হবে। পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন না থাকলে তার সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে পারবে না।

I always like to learn new things and spread them. Therefore, my main goal is to highlight various new topics related to online business, online income, blogging and information technology.

Leave a Comment